বিএনপি নানা সময়ে নানা ঘোষণা দিয়েছে। এখন তারা বলছে- আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে নাকি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে! আমরা জানি আপনারা (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা) তাদের সব কর্মসূচি ব্যর্থ করে দেবেন। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে- তারা ষড়যন্ত্রকারী ও চক্রান্তকারী। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে আঘাত আনার চেষ্টা করতে পারে। এজন্য আপনাদের আরও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচন পর্যন্ত সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।
শুক্রবার বিকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি যদি না আসে, ২০১৩ সালে নির্বাচনে না এসে যে পরিণত হয়েছিল, এবারও তাদের একই পরিণতি হবে। সরকারের পতন হবে না।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারা (বিএনপি) এখন বলছে- এটা মহড়া। অক্টোবরে নাকি চূড়ান্ত আঘাত আনবে! আসুন আমরাও শপথ নেই, অতীতে যেভাবে মোকাবিলা করেছি, আগামীতেও মোকাবিলা করব। বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি যদি না আসে, ২০১৩ সালে নির্বাচনে না এসে যে পরিণত হয়েছিল, এবারও তাদের একই পরিণতি হবে। সরকারের পতন হবে না।
তিনি বলেন, হেফাজত নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কিছু লবিস্ট, যারা বিএনপি-জামায়াত ও ধর্মান্ধদের টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়। আদিলুর রহমান টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আহ্বান জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঠিক বিএনপির ভাষায় আরেকটি রেজুলেশন নিয়েছে। আমি তাদের আহ্বান জানাই- আপনারা বাংলাদেশে টিম পাঠান। আপনারা বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই, মানবাধিকার হুমকির মুখে। মানবাধিকার কি শুধু মিথ্যাচার করা?
তিনি আরও বলেন, আপনারা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশের দুই-এক ভাগ সংখ্যালঘু যদি বলে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নিরাপত্তা দেয়নি, সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নেই, আমরা এ দেশে সরকারে থাকব না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমপি হিসেবে বলছি, এ দেশ হিন্দু, খ্রিস্টান, গারো-চাকমা প্রতিটি মানুষের। এই সংখ্যালঘুদের ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যই আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক ও সোচ্চার থাকবেন। সভাপতি-সম্পাদক ডাকার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নামতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, যারা যড়যন্ত্র করছে তাদের বলব- এই সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে পতন ঘটানো যাবে না। বিদেশি যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবতার কথা বলে তারা এই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে থাকবে না। আশা করি- সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতা নসাৎ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনব।
হানিফ আরও বলেন, মির্জা ফখরুলের এখন আর হাসি-খুশি মুখ নেই। স্যাংশন-ভিসানীতি করে ভেবেছিল তারা ক্ষমতায় এসে গেছে। কিন্তু এখন মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি ভেবেছিল হেফাজতের সমাবেশে যোগ দিয়ে সরকার পতন হবে।
অধিকারের চেয়ারম্যান আদিলুর রহমানের সাজার বিষয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে হানিফ বলেন, হেফাজতের মহাসমাবেশ ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অধিকার বলেছিল। সেই মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তার দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এজন্য মির্জা ফখরুলের দুঃখ কীসের?
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন যারা আমাদের প্রতিপক্ষ, যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়, তারাও কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি নানা ঘোষণা দিয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের পর নাকি খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে! কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। কারণ আপনারা সব সময় ঢাকাসহ সারা দেশে রাজপথে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এখন তারা বলছে- আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে তারা নাকি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে! আমরা জানি আপনারা তাদের সব কর্মসূচি ব্যর্থ করে দেবেন। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে-তারা ষড়যন্ত্রকারী-চক্রান্তকারী। তারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে আঘাত আনার চেষ্টা করতে পারে। এজন্য আপনাদেরও সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।
সভায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বিএনপির সব দফার দফা-রফা অবস্থা। ১৯ দফা থেকে এক দফা, সেটাও এখন ধূলিসাৎ। এখন কোনোভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারলেই মনে হয় তারা সন্তুষ্ট। নির্বাচনের নমিনেশন নিয়ে তারা লাফ-ঝাঁপ দিচ্ছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. দিলীপ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ কামাল প্রমুখ।