মহামারী নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন বাম সংগঠন।
সরকারি এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে সংগঠনগুলো বলছে, এর ফলে শ্রমিকের ‘ঝুঁকির’ মধ্যে ফেলে দেওয়া হল।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় ঈদের পর যে লকডাউন শুরু হয়েছে, তাতে সব শিল্প কারখানাও ৫ অগাস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে সরকার জানিয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বারবার অনুরোধে শুক্রবার সরকার জানায়, রপ্তানিমুখী কারখানা রোববার থেকে লকডাউনের আওতামুক্ত। অর্থাৎ রোববার থেকে তৈরি পোশাক কারখানা খোলা।
এই সিদ্ধান্ত জানার পর শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে পোশাককর্মীরা ঢাকায় রওনা হয়, যদিও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কোনো বাস নেই সড়কে।
বাম গণতান্ত্রিক জোট লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী সত্ত্বেও রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকার মানুষের জীবন রক্ষা নয়, পোশাক মালিকদের মুনাফা লাভের স্বার্থরক্ষাকারী পাহারাদার।”
করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু যেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যখন লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, তখন কারখানা খোলার ঘোষণায় গোটা দেশবাসীকে ‘হতবাক’ বলে মন্তব্য করেন বাম নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, “জনগণের কাছে দায়হীন আমলানির্ভর লুটপাটকারীদের স্বার্থ রক্ষাকারী সরকার গত বছরেও এপ্রিল-মে মাসে সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার সময় গার্মেন্টস খোলা ও সমালোচনার মুখে পুনরায় বন্ধ করার মাধ্যমে শ্রমিকদের নির্মম ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছিল।
“ছুটিতে বাড়ি যাওয়া শ্রমিকেরা শত শত মাইল পায়ে হেঁটে, রিকশা-ভ্যান-অটো, মাছের ড্রামে অবর্ণনীয় কষ্ট করে একবার ঢাকা-সাভার-গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জ এসেছিল, আবার বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। এতে করোনা সংক্রমণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।”
এবারও শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা না করে, টিকা না দিয়ে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের আবারও ‘মহাবিপদে’ ফেলে দিল, বলেন বাম জোটের নেতারা।
লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়ায় শ্রমিকদের ‘দ্বিমুখী সংকটে’ ঠেলে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট।
কারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন, টিকা ও ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বার বার বলছিল লকডাউনে শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে। এখন শিল্প মালিকদের চাপে তা খুলে দিল।
“ফলে চাকরি হারানোর ভয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যেয়ে আটকে থাকা লাখ-লাখ শ্রমিককে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় দুর্ভোগ আর ঝুঁকিকে সঙ্গী করে একদিনের মধ্যে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। পরিবহন ও আনুসাঙ্গিক আয়োজন ছাড়া সরকারের এই ঘোষণা একদিকে শ্রমিকদের যাত্রাপথের ঝুঁকি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যায়ের ক্ষতি, অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ আর চাকরি হারানোর ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গত বছর দেখেছি, শিল্প মালিকরা ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করার অনুমতি নিয়ে কিভাবে গ্রামে অবস্থানকারী শ্রমিকদের ফোন করে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল।”
আলাদা এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ‘কঠোর লকডাউনে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘চরম অবিবেচনাপ্রসূত ও অমানবিক’ আখ্যা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “গণপরিবহন বন্ধ, সকল শ্রমিকদের ভ্যাসকিন দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মালিকের মুনাফার স্বার্থ রক্ষায় কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকি ও ভোগান্তিতে ফেলবে। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।”