জাতীয়

কারাগারে বিএনপি নেতা ইশরাক

রাজধানীর মতিঝিলে লিফলেট বিতরণের সময় বুধবার বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টায় শাপলা চত্বর থেকে তাকে মতিঝিল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পুরোনো এক মামলায় আদালতে নেওয়া হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে নেওয়ার সময় তাকে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপিরকর্মীরা। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করলে কর্মীরাও ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। এতে অন্তত চারজন আহত হন। পুলিশ চারজনকে আটক করে।

ইশরাক হোসেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য। ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন ইশরাক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল দক্ষিণের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের কাছে লিফলেট বিতরণ করছিলেন ইশরাক। তাকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক মিঠু জানান, ইশরাকের বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ওই মামলায় পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

ইশরাককে আদালতে নিয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামিপক্ষে মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ কয়েকজন আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান জামিনের বিরোধিতা করেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ মতিঝিল থানায় ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় আসামি ছিলেন ইশরাক। তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিু আদালতে আত্মসমর্পণ করে গত বছরের ৫ জানুয়ারি জামিন পান। ১৮ আগস্ট ইশরাক আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

দুপুর আড়াইটার দিকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নিতে ইশরাককে আদালতের হাজতখানা থেকে বের করা হয়। সিএমএম আদালতসংলগ্ন রায় সাহেব বাজার মোড়ে পৌঁছালে তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি আটকে দেন বিএনপিরকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। উত্তরে কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে ওই প্রিজনভ্যানেই ইশরাককে নেওয়া হয় কারাগারে।

পুলিশ জানায়, নেতাকর্মীদের হামলায় কোতোয়ালি থানার ওসি (অপারেশন) নাজমুল হক, এএসআই পার্থ, শাহীন ও প্রিজন ভ্যানের ড্রাইভার ক?নস্টেবল আরশাদ আহত হন। তাদেরকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চারজনকে আটক করে। এরা হলেন-মো. ওবায়দুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান, আলাউদ্দিন ও ইমতিয়াজ হাসান জনি। এ বিষয়ে পৃথক মামলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রাজিব মিয়া বলেন, হামলায় প্রিজনভ্যানটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়।

নিঃশর্ত মুক্তির দাবি মির্জা ফখরুল-রিজভীর : প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে প্রচারপত্র বিলির মতো একটি জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতারে আবারও প্রমাণিত হলো এ সরকার চরম জুলুমবাজ সরকার। ভয়াবহ আওয়ামী দুঃশাসনে জনগণের তীব্র ক্ষোভের মুখে সরকার এখন নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে ভোটারবিহীন সরকারের জিঘাংসার মাত্রা ততই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। চারিদিকে দুর্ভিক্ষের ন্যায় পরিস্থিতি বিরাজ করার কারণে সরকার জনগণকে দমনের জন্য হয়রানি, জুলুম-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ইত্যাদিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।

অন্যদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের সব ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে ইশরাক হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারুণ্যদীপ্ত এ বলিষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার সম্পূর্ণরূপে কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।

এ ছাড়া পৃথক বিবৃতিতে ইশরাককে গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়ে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *