কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। পরিস্থিতি এমন যে, গোলা-কামান নিয়ে যুদ্ধে প্রস্তুত পারমাণবিক শক্তিধারী প্রতিবেশী দুই দেশ। তবে ভারত-পাকিস্তান এই দ্বন্দ্বের রয়েছে ৭৮ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস। শনিবার এক প্রতিবেদনে দুই ভূ-খণ্ডের সেই সংঘাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছে আল-জাজিরা।
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের ভারতে বিভক্ত হয়। সেসময় থেকেই ‘ভূস্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে হিন্দু রাজার শাসনাধীন কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালে প্রথম এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় সদ্য স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পাকিস্তান মূলত উত্তর ও পশ্চিম অংশ অর্থাৎ আজাদ কাশ্মীর, গিলগিট এবং বালতিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশ। যার মধ্যে কাশ্মীর উপত্যকা এবং এর বৃহত্তম শহর শ্রীনগর, পাশাপাশি জম্মু এবং লাদাখও রয়েছে। কাশ্মীর স্বায়ত্তশাসিত থাকবে, এই অঞ্চলের নিজস্ব সংবিধান, পতাকা ও আইন থাকবে-এমন প্রতিশ্রুতিতে কাশ্মীরের হিন্দু রাজা হরি সিং ভারতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে চুক্তির অংশ হিসাবে নয়াদিল্লি প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ খাতের দায়িত্ব পালন করবে বলে ঠিক হয়। এই বিশেষ মর্যাদা ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা মোদি সরকার ২০১৯ সালে বাতিল করে দেয়।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান আরও দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয় ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে। ২০০৩ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে এক হামলায় তিন দিনে ১৬৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতে জড়ানোর আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এছাড়াও ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে আমন্ত্রণ জানানোর পর দুই দেশ শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে দেখা করায় সেই আশা ক্ষণস্থায়ী হয়।
২০১৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর ওপর এক মারাত্মক হামলা হয়, যার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ। এরপরই নরেন্দ্র মোদি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে নিজস্ব আইন নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে ফোন সিগন্যাল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া এবং বহু মানুষকে আটক করা হয়।
এরপর দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলার পর ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে আবারও উত্তেজনা শুরু হয়। হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।