কুমিল্লায় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মীকে গুলিতে আহত করার ঘটনায় আটক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার রাতে কুমিল্লার বিচারিক হাকিম আবু বকর সিদ্দিক এ আদেশ দেন বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান।
একই স্থানে ছাত্রলীগ ও এলডিপির অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে সোমবার দুপুরে কুমিল্লার চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ফটকে রেদোয়ানের বন্দুকের গুলিতে এক ছাত্রলীগ ও এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সোমবার বিকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কারাগারে পাঠানো চারজন হলেন এলডিপি মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদ (৬৯), চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের রবিউল্লাহর ছেলে আলী (৩৭), হারং গ্রামের আব্দুল মবিনের ছেলে বাকি বিল্লাহ (৩৯) এবং রেদোয়ান আহমেদের গাড়িচালক সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া খামারখাতা গ্রামের রেজাউল করিম (৫৫)।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে গুলি ছোড়েন। প্রাথমিকভাবে রেদোয়ান আহমেদ গুলি ছোড়ার সত্যতার প্রমাণ মিলেছে।
“কাজী আখলাকুর রহমান জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
সোমবার বিকাল ৪টায় চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ মমতাজ আহমেদ ভবনে কলেজ ছাত্রলীগ ও পৌর এলডিপি পাল্টাপাল্টি ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। দুপুর ১টার পর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন।
দুপুর আড়াইটায় রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ প্রধান ফটকের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের সঙ্গে এলডিপি নেতাকর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষ উত্তেজিত হয়ে ওঠার পর রেদোয়ান আহমেদ গাড়ির জানালা খুলে পরপর দুটি গুলি করেন। এতে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
এরপর তিনি জনতার রোষ থেকে বাঁচতে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন এবং পুলিশ তাকে আটক করে।
২০০১ সালে রেদোয়ান বিএনপির মনোনয়নে কুমিল্লা-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ওই সরকারের শাসনামলের শেষ দিকে বিএনপি থেকে বেরিয়ে তিনি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দেন। এই দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়েছে।
রেদোয়ান আহমেদকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এলডিপি মহাসচিব পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনার শিকার।
সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “চান্দিনায় রেদোয়ান আহমেদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় আবার প্রমাণিত হল, দেশে এখন ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে।”
রেদোয়ান হামলার শিকার হয়েছিলেন দাবি করে তার জন্য দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ চাইলেও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও নেতৃবৃন্দের ওপর হামলায় সরকারের স্ববিরোধিতাই ফুটে ওঠে। এই সরকার যে সন্ত্রাসনির্ভর তা এধরনের হামলায় স্পষ্ট হচ্ছে।”