হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে। ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিই মোহাম্মদ মোখবারের নাম ঘোষণা করেছেন।
নিয়মানুসারে ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। মোখবারকে এখন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব সামলাবেন।
বর্তমান শাসকদের কাছে প্রাথমিকভাবে যে বিষয় গুরুত্ব পাবে তা হলো শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা। মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- তারা মানুষকে সেবা করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাবেন। কোনোরকম বিঘ্ন ছাড়াই সরকার কাজ করে যাবে বলে শপথ নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
জার্মান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি টাইসের গবেষক হামিদরেজা আজিজি বলেছেন, ৬৯ বছর বয়সি মোখবার শিয়া ধর্মীয় নেতাদের আস্থাভাজন। তার সঙ্গে ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সম্পর্কও খুব ভালো। ফলে প্রশাসনে আইআরজিসি-র ভূমিকা আগের মতোই থাকবে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আইআরজিসির নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়তে পারে।
রোববার আজারবাইজান সীমান্তে একটি বাঁধের উদ্বোধন করে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তেহরান ফিরছিলেন, তখনই তার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। কোন পরিস্থিতিতে এ দুর্ঘটনা হলো, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।
হামবুর্গের থিংক ট্যাংক জার্মান ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিসের ইরান বিশেষজ্ঞ সারা বাজোবান্দি বলেছেন, এখন এ নিয়ে নানান ধরনের অনুমান ও অসমর্থিত রিপোর্ট সামনে আসবে।
তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক হতে পারে, অর্ন্তঘাতও হতে পারে, এমনকি রাইসির রাজনৈতিক বৃত্তে থাকা কারোর হাতও থাকতে পারে। কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইরানের মানুষ চাইবেন, এ দুর্ঘটনা নিয়ে আগামী দিনে আরও তথ্য সামনে আসুক।
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের বিশেষজ্ঞ করিম সাদজাদপোর বলেছেন, রাইসির মৃত্যুর ফলে ইরানে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের সংকট আসতে পারে। খুব কম মানুষই মনে করেন, স্বাভাবিক দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যু হয়েছে।
রাইসির মৃত্যুর পর আরেকটি বিষয় সামনে আসতে পারে, তা হলো খামেনির উত্তরাধিকারী কে হবেন?
ইরান বিশেষজ্ঞদের মতে, যে দুইজনের নাম নিয়ে আলোচনা হতো, তার মধ্যে একজন ছিলেন রাইসি এবং অন্যজন হলেন ৫৫ বছর বয়সি মোজতাবা, যিনি পর্দার পেছন থেকে এতদিন প্রভাব বিস্তার করেছেন।
অনেকে মনে করেন, মোজতাবা সর্বোচ্চ নেতা হলে ইরানের মানুষের একটা বড় অংশ খুশি হবেন না। সাজাদপোর লিখেছেন, মোজতাবা খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হলে বিক্ষোভ হতে পারে। সেক্ষেত্রে মোজতাবা পুরোপুরি রেভলিউশনারি গার্ডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।
কিন্তু বাজোবান্দি বলেন, নতুন করে ইরানে কোনো গণআন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর অত্যন্ত কড়া হাতে বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে। বিরোধীরা পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের আমলেও কোনো দিশা পরিবর্তন হবে না। তিনিও খামেনির নির্দেশ মেনে চলবেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।
‘নির্বাচনে চমক প্রত্যাশিত নয়’
ইরান বিশেষজ্ঞ সারা বাজোবান্দি বলেছেন, ৫০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এটা অনুমান করাই যায় যে, এর মধ্যে কোনো চমক থাকবে না। রাজনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে মানুষের উৎসাহ কম হতে পারে।
তিনি বলেন, মানুষ এ শাসকদের বিশ্বাস করে না। আর শাসক পরিবর্তনের আশাও তাদের নেই। অনেক নাগরিক মনে করেন, ভোট হওয়ার আগেই তারা জানেন, কে জিতবে। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হতেই পারেন।
এখন ইরানে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ৫০ শতাংশ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, প্রচুর মানুষ আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। ২০২৩ সালে সরকার ৮৫৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে। ২০১৫ সালের পর এত বেশি মৃত্যুদণ্ড কখনো কার্যকর হয়নি।