কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের জোড়া রেকর্ড ভেঙে ম্যাচটি নিজের করে নিয়েছেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নজর কেড়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারও।
তবে কম যান না মোহাম্মদ শামিও। বল হাতে একাই ৭ উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিলেন এই ডানহাতি পেসার। আর দারুণ জয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল স্বাগতিক ভারত।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ আসরের প্রথম সেমিফাইনালে কিউইদের ৭০ রানে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। আগে ব্যাট করে কোহলি ও আইয়ারের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩৯৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। জবাবে ৩২৭ রান তুলতেই সব উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি কিউইরা। দলীয় ৩৯ রানেই দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রের উইকেট হারিয়ে বসে তারা। দুজনেই ব্যক্তিগত ১৩ রান করে বিদায় নেন শামির শিকার হয়ে। তবে এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল প্রতিরোধ গড়েছিলেন। ১৮১ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় রাখেন এই দুই ব্যাটার।
এই জুটি ভাঙতে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন ভারতীয় বোলাররা, তখন ত্রাতা হয়ে আসেন শামি। উইলিয়ামসনকে (৬৯) ফিরিয়ে জুটি ভাঙার পর টম লাথ্যামকে (০) ফেরান খালি হাতে। আর তাতেই বিশ্বকাপে দ্রুততম সময়ে ৫০তম উইকেটের দেখা পেয়ে যান তিনি। মাত্র ১৭ ইনিংসে ৫০ উইকেটের মালিক হয়েছেন তিনি। এর আগে ১৯ ইনিংসে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করে রেকর্ডের মালিক হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। একইসঙ্গে স্টার্ককে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশিবার (৪) পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়ার কীর্তিও গড়েছেন শামি।
একদিকে শামির বলে টপাটপ উইকেট পড়ছিল, অন্যদিকে একপ্রান্তে লড়াই জারি রেখে সেঞ্চুরি তুলে নেন কিউই ব্যাটার ডেরিল মিচেল। এরপরও দলকে ম্যাচে রেখেছিলেন মিচেল, কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে সহায়তা পাননি তিনি। যা একটু চেষ্টা করেছিলেন গ্লেন ফিলিপস (৪১)। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ৪৫তম ওভারে এসে মিচেলকে (১৩৪) বিদায় করে বাকি কাজ সেরে নেন শামি। এরপর ৪৯তম ওভারে আর ২ উইকেট তুলে নিয়ে গুঁটিয়ে দেন কিউইদের ইনিংস।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের উড়ন্ত শুরুর পর রোহিত যখন ফিফটির তিন রান দূরে, ঠিক তখনই বিদায় নিতে হয় তাকে। অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে টিম সাউথির স্লোয়ার উড়িয়ে মারেন ভারতীয় অধিনায়ক। মিড অফে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে তাকে বিদায় করেন কেন উইলিয়ামসন। ২৯ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ রান করে নেন বিদায়।
রোহিতের বিদায়ের পর দলকে টেনেছেন শুভমান গিল। সেঞ্চুরির পথে এগোলেও শেষ পর্যন্ত ইনজুরির কারণে পারলেন না, ছাড়তে হয়েছে মাঠ। রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার আগে নিজের ৬৫ বলে ৭৯ ইনিংসটি সাজান ৮ চার ও ৩ ছক্কায়। তবে লড়াই চালিয়ে যান কোহলি। ৫৯ বলে তুলে নেন ৭২তম ওয়ানডে ফিফটি, বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে যেটি প্রথম।
৮০তম রান নেওয়ার সময় তিনি ছাড়িয়ে যান শচীন টেন্ডুলকারকে। ২০০৩ সালের আসরে ১১ ইনিংসে ৬৭৩ রান করেছিলেন টেন্ডুলকার। ২০ বছর পর এক ইনিংস কম খেলেই তাকে টপকে গেলেন কোহলি। এরপর ১০৬ বলে পান সেঞ্চুরির দেখা। একইসঙ্গে শচীনকে তিনি ছাড়িয়ে যান আবারও। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০টি শতক এখন কেবল তার দখলে।
১২৮ বলে ১৬৩ রানের জুটি গড়ার পর সাউথির বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বিদায় নেন কোহলি। ১১৩ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ১১৭ রানের ইনিংস খেলে তিনি ফেরেন সাজঘরে। তবে লড়াই চালিয়ে যান শ্রেয়াস। মাত্র ৩৫ বলে প্রথম ফিফটি ছুঁয়ে পরের ফিফটি পূর্ণ করেন ৩২ বলে। সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর আর ৫ রান যোগ করে তিনি বিদায় নেন বোল্টের বলে।
শেষদিকে আবারও ব্যাট করতে নেমেন ইনজুরিতে মাঠ ছাড়া গিল। তবে এই যাত্রায় তার ব্যাট থেকে আসে কেবল এক রান। আর লোকেশ রাহুলের ২০ বলে ৩৯ রানের ক্যামিওতে বিশাল সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের মোহাম্মদ শামি।