অর্থনীতি

ক্লিনফিডে বিজ্ঞাপনে রাজস্ব ক্ষতি ১২০০ কোটি টাকা

দেশে বিদেশি চ্যানেল প্রচার বন্ধ থাকা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিদেশি চ্যানেলগুলোর দেশে ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপনমুক্ত) প্রচার ইস্যুতে বন্ধ থাকায় দেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন ও সরকারের রাজস্ব ক্ষতি প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-অ্যাটকো সূত্রে জানা যায় এ তথ্য। এদিকে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধের একদিনের মাথায় কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) পুরোপুরি ডিজিটাইজ পদ্ধতি প্রয়োগের আগ পর্যন্ত বিদেশি চ্যানেল প্রচারের অনুমতির জন্য তথ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।

শুক্রবার ভোর থেকে দেশে বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। ক্লিনফিড ছাড়া বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেল দেশে সম্প্রচার করা যাবে না-সরকারের এমন নির্দেশনায় কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এসব চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এদিকে শনিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। বিদেশি চ্যানেলগুলোর যারা এজেন্ট ও অপারেটর, তারা বিজ্ঞাপনমুক্ত ফিড চালাতে পারছে না বলে সম্প্রচার বন্ধ করেছে। যেসব বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনবিহীনভাবে সম্প্রচার করছে, তাদের চ্যানেল কিন্তু চলছে, চলতে কোনো বাধা নেই।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বছরের পর বছর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনসহ সম্প্রচার করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশ প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই কারণে আমরা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, সেটিকে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন, সম্প্রচার জার্নালিস্ট ফোরামসহ সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। আমরা আশা করব, বিদেশি চ্যানেলগুলো খুব শিগগিরই বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে বাংলাদেশে ফিড পাঠাবে।

জানতে চাইলে অ্যাটকো সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, সারা পৃথিবীতে এক দেশের চ্যানেল যখন অন্য দেশে যায়, তখন সেটা ক্লিনফিড হিসাবে যাওয়াটাই নিয়ম। আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো যখন যুক্তরাজ্যে বা অন্য কোনো দেশে যায়, তখন ক্লিনফিড দিতে হয়। ‘ক্লিনফিড’ মানে হলো দুটো অনুষ্ঠানের মাঝখানে কোনো বিজ্ঞাপন থাকবে না। বিজ্ঞাপন না থাকার কারণ-এক দেশের বিজ্ঞাপন আরেক দেশের সাংস্কৃতিক ও সেন্সরে বিবেচনায় যথোপযুক্ত নাও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বাইরের চ্যানেগুলোয় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশি চ্যানেলগুলোর জন্য হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টা এমন ওদের টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখালে তো এদেশের মানুষও দেখতে পায়। এতে বছরে আমাদের বিজ্ঞাপন ক্ষতি প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট, ট্যাক্স হিসাবে সরকারে ক্ষতি ২৫% হারে ৩০০ কোটি টাকা। আমরা চ্যানেলগুলো বঞ্চিত হই ৯০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে আবার বিজ্ঞাপন বাবদ সরকারকে আমরা করপোরেট ট্যাক্স দিই ৩৩%। অর্থাৎ আরও ৩০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকা। এই ৬০০ কোটি টাকা যদি বাংলাদেশের রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইনগুলো পেত, তাহলে সবাই একটি স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসত। বিদেশি চ্যানেলের পরিবেশকদের বারবার বলেও কোনো কাজ হচ্ছিল না। তারা কিন্তু ইচ্ছা করলেই ক্লিনফিড করতে পারে। বিজ্ঞাপন যখন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চালানো হয়, তখন বদলানো হয়। আমাদের দেশে আসলে বিজ্ঞাপনের জায়গায় প্রমো দিতে পারে। পরিবেশকরা যদি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যৌক্তিকভাবে এক-দুই মাস সময় নেয়, সেটা ভাবা যায়। আমরা তাদের বলব দেশের আইন মেনে কাজ করতে।

জানতে চাইলে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমরা কোয়াব ঐক্য পরিষদ আজ (শনিবার) সদস্যদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেছি। দেশের আইন মেনে আমরা ব্যবসা করি। যেহেতু সরকার একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেহেতু সেই অনুযায়ী অমরা যে বিদেশি চ্যানেলগুলোয় বিজ্ঞাপন আসে সেগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রেখেছি। তবে শুধু বাংলাদেশি চ্যানেল দিয়ে আমরা খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না। আমাদের অভিভাবক তথ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা অনুরোধ করেছি, অন্তত ডিজিটাল হওয়া পর্যন্ত বিদেশি এ চ্যানেলগুলো প্রচারের পুনঃআদেশ যেন দেওয়া হয়।

এদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নির্দেশনায় বিদেশি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত বা ক্লিনফিড সম্প্রচার বাস্তবায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে।

শনিবার দুটি পৃথক বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব আব্দুল মজিদ এবং ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনমুক্ত বা ক্লিনফিড সম্প্রচার না করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতি, শিল্পী, সংস্কৃতি ও মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *