খাজা টাওয়ারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশ গ্রাহক পূর্ণগতির ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন। বাকিরা শতভাগ না পেলেও ধীরগতির সেবা পাচ্ছেন।
বর্তমানে দেশে মোট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। শনিবার আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুরো নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এজন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। তার মতে আগুনের ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মোবাইলের ভয়েস কল ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার ৯০ শতাংশ শনিবার রাতের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে জানা গেছে।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অ্যাপ-নির্ভর যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে এখনও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকাশ, নগদসহ ব্যাংকগুলোর এটিএম কার্ড ব্যবহারে এখন সমস্যা হচ্ছে না ।
মহাখালীর খাজা টাওয়ারে দুটি ডাটা সেন্টার, আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) এক্সচেঞ্জ, ১০টির বেশি আইআইজি প্রতিষ্ঠান, একাধিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) অফিস, কলসেন্টার রয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে প্রযুক্তিনির্ভর একাধিক প্রতিষ্ঠান।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি ভবনে সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থাকায় কোনো ধরনের ব্যাকআপ ছিল না। তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে আরও একাধিক সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান।
তাদের মতে, ইন্টারনেট এখন একান্ত অপরিহার্য একটি উপদান। ইন্টারনেট ছাড়া ১ দিনও চলা যায় না। বিলাসিতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ইন্টারনেট এখন অপরিহার্য উপাদান। তাদের মতে ঢাকা শহরে এ ধরনের আরও ডাটা সেন্টার থাকলে ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।
বিশেষজ্ঞরা ও ব্যবসায়ীরা সরকারি উদ্যোগে ঢাকায় আরও ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বলেন, আমরা সরকারের কাছে ঢাকা শহরে চার-পাঁচটি ডাটা সেন্টার চাই। ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগে অন্তত একটি করে ডাটা সেন্টার করে দিলে এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে সরকার ডাটা সেন্টার করে দিলে আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারব। আমাদের মূল সমস্যা হলো, জায়গা নেই। সরকার যদি আমাদের জায়গা দিয়ে ডাটা সেন্টার তৈরি করে নিতে বলে, বেসরকারিভাবে সেটা সম্ভব। যেসব আইআইজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যদি সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি ডাটা সেন্টারে ব্যাকআপ থাকত, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি যেমন কম হতো, তেমনি তারা দ্রুত সেবায় ফিরতে পারত।
ইন্টারনেট পরিস্থিতির হালনাগাদ খবর জানতে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক শনিবার সকালে কথা হয়।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সচল ও কর্মক্ষম ডিভাইসগুলো বের করে অন্য ডাটা সেন্টারে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে দ্রুত ইন্টারনেটের অচল অংশগুলো সচল করা সম্ভব হয়েছে। তার মতে পুরো গতি ফিরে পেতে কমপক্ষে আরও একদিন অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে এখন দুটি বাধা। প্রথমত, এনটিটিএন (ভূগর্ভস্থ কেবল সেবা) ট্রান্সমিশনে ধীরগতি। দ্বিতীয়ত, আমরা লাইভ করে দিয়েছি কিন্তু ক্যাশ সার্ভার আপডেট হতে সময় লাগছে। ক্যাশ সার্ভার আপডেট হতে সাধারণত ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। অনেক সময় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টাও লেগে যায়। তবে আশা করছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আপডেট হয়ে যাবে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, এখনও ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। আরও সময় লাগবে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করেন তিনি।
জানা গেছে, খাজা টাওয়ারে একাধিক আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট, ভার্গো ও উইনস্ট্রিমসহ ৯ থেকে ১০টি আইআইজি পুরোপুরি শাটডাউন হয়ে গেছে। বড় দু-একটি আইআইজির ব্যাকআপ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত নিজেদের সামলে নিয়ে গ্রাহকসেবা দিতে শুরু করেছে।