দরজায় দাঁড়িয়ে নতুন বছর। তবে নানা কারণেই ২০২০ সাল বিশ্ববাসী ভুলে যেতে পারবেন না। কেউ কেউ হয়তো এটাকে ভুতুড়ে সাল বলেও আখ্যায়িত করতে পারেন। বছরের শুরু থেকেই বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গিয়েছিলো জনজীবন। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রায় চার মাস নির্বাসনে ছিল বিশ্ব ক্রিকেট। কিন্তু জৈব সুরক্ষা বলয়ের সহায়তায় সেটা মাঠে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। খেলোয়াড়দের সুরক্ষা, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অনেক নতুন নিয়ম প্রবর্তন করেছে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি। যদিও দর্শক শূন্যতার কারণে খেলাটার জৌলুসে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় একটি অর্জনের কথা সারাজীবন মনে রাখবে দেশবাসী। তাহলো যুবাদের বিশ্বকাপ জয়।
২০২০ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক চারটি শিরোপা জয়ী ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত এই আসরে বিশ্বকাপজয়ীদের তালিকায় নাম লেখিয়েছে টাইগার তরুণরা।
সাকিবের ফেরা:
২০২০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আরো একটি সুখবর সাকিবের ফেরা। ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর। সে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ বছরের অক্টোবরে অনুশীলনে ফেরেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। জেমকন খুলনার হয়ে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে।
২০০০ সাল থেকে ক্রিকেট বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ৪৫টি টেস্ট ও ১৩৫টি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অথচ এ বছর সব দল মিলে ২৫টি টেস্ট এবং ৫০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম এত কমসংখ্যক ম্যাচ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। এ বছরই রেকর্ডসংখ্যক টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা ছিল টাইগারদের কিন্তু করোনায় সেই সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
করোনার কারণে বাংলাদেশের যেসব সিরিজ স্থগিত:
করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের চারটি সিরিজ স্থগিত হয়েছে । চলতি বছরের এপ্রিলে একটি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। জুনে দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। জুলাই মাসে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়ার কথা ছিল শ্রীলংকায়। এরপর আগস্টে দুই টেস্ট খেলতে আসার কথা ছিল নিউজিল্যান্ডের। করোনায় এতগুলো সিরিজ বাতিল হয় যাওয়ায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এমন পরিস্থিতিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন।
মেয়েদের আইপিএলে সালমা-জাহানারা:
এবার আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইপিএল। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের আইপিএলও গড়িয়েছে মাঠে। ‘টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ’ নামে মেয়েদের আইপিএল আয়োজন করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই। আর মেয়েদের এই টুর্নামেন্টটিও হয়েছে আরব আমিরাতে। নারীদের এই আসরে বাংলাদেশের জন্য সুখবর বয়ে এনেছেন দেশের দুই অভিজ্ঞ নারী ক্রিকেটার সালমা খাতুন ও জাহানারা আলম।
টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের পেসার জাহানারা আলম খেলেছেন ভেলোসিটির হয়ে। আর জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খেলেছেন ট্রেইলব্লেজারসের হয়ে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মতো অন্যান্য ফেডারেশনও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপও ছিল কিন্তু করোনায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। গত নভেম্বরে ফিফার অনুমতিসাপেক্ষে নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করে বাফুফে। দ্বিপাক্ষিক সেই সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ দল।
বাফুফে নির্বাচন:
বাংলাদেশ ফুটবল অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল বাফুফে নির্বাচন নিয়ে। গত ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন। তবে চিত্র বদলায়নি। আবারও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। এই নিয়ে টানা চতুর্থবার বাফুফে প্রধান হলেন তিনি।
ক্রিকেট ফেরাল জৈব সুরক্ষা বলয়:
করোনার প্রকোপের কথা মাথায় রেখেও গ্রীষ্মে ক্রিকেট মাঠে গড়ানোর পরিকল্পনা নেয় ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। তা না হলে বড় ধরনের আর্থিক লোকসানে পড়তে হতো। ৮ জুলাই সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টের মধ্য দিয়েই ভাঙে ২২ গজের নীরবতা। জৈব সুরক্ষা বলয় ছাড়া যা সম্ভবই ছিল না! যেখানে দুই দলকে থাকতে হয়েছে নির্ধারিত সীমানার ভেতর। ইংল্যান্ডের পর বাকি দেশগুলোও এভাবেই ফের স্বাগত জানিয়েছে ক্রিকেটকে।
আইসিসির নিয়মের পরিবর্তন:
স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বলে লালা ব্যবহারে দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ভ্রমণ জটিলতার কারণে তিন সংস্করণে দেওয়া হয়েছে স্বাগতিক আম্পায়ারদের দিয়ে ম্যাচ চালানোর অনুমতি। ভুল সিদ্ধান্ত কমাতে তাই বাড়ানো হয়েছে রিভিউ সংখ্যা।
স্থগিত টি-২০ বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ:
চার বছরের বিরতি কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপ এবার হবে কি না, এ নিয়ে হয়েছে রাজ্যের আলোচনা। নানা জল্পনা-কল্পনার পর শেষ পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্তই নেয় আইসিসি। দুই বছর পিছিয়ে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় হবে আসরটি। তার আগে এক বছর পেছানো হয় এশিয়া কাপও। এছাড়া বছর জুড়ে স্থগিত হয়েছে আইসিসির অন্যান্য টুর্নামেন্ট ও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো।
পুরুষে ইংল্যান্ড, নারীতে অস্ট্রেলিয়া:
করোনার ধাক্কার পরও পুরুষ-নারী ক্রিকেট মিলিয়ে এই বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে ২২০ ম্যাচ। ফেব্রুয়ারিতে মেলবোর্নে রেকর্ড সংখ্যক দর্শকের নারী টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা উচিয়ে ধরে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে গত বছরের মতো এবারও পুরুষ ক্রিকেটে বছরটা নিজেদের করে নেয় ইংল্যান্ড। সোমবার ( ২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সর্বোচ্চ টেস্টে ছয়টি ও টি-২০-তে আটটি ম্যাচ জিতে বছর শেষ করে ইংলিশরা। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ছয়টি ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
এদিকে ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে টি-২০ সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু পরে করোনার কারণে ওয়ানডে সিরিজ স্থগিত রেখেই ফিরে আসে ইংলিশরা।
ভারতের ‘৩৬’ লজ্জা:
বছরের শেষান্তে এসে অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিল। কোহলি, রাহানে, পুজারাদের নিয়ে গড়া ভারত মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয়।
অতঃপর গ্যালারিতে দর্শকদের ফেরা:
ক্রিকেট না হয় মাঠে ফিরল, কিন্তু গ্যালারিতে দর্শক কবে ফিরবে? সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটায় অস্ট্রেলিয়া। গ্যালারিতে দর্শকদের সঙ্গে করেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
২০২০ এ যেসব ক্রিকেটার অবসর নিয়েছেন:
ক্রিকেটাররা একটু অফফর্মে থাকলেই তাদের অবসর নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয় বিশ্বজুড়েই। এমন সমালোচনার পরই ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি হঠাৎ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ান। তার দেখাদেখি ভারতের আরেক তারকা ক্রিকেটার সুরেশ রায়নাও অবসরের ঘোষণা দেন। গুঞ্জন রয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষের ওপর অভিমান করেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন পাকিস্তানের তারকা বোলার মোহাম্মদ আমির। আর বয়সের ভাঁড়ে এ বছরই অবসরের ঘোষণা দেন জিম্বাবুয়ের তারকা ক্রিকেটার এলটন চিগুম্বুরা।
মেসি-বার্সেলোনা ঠাণ্ডা যুদ্ধ:
২০২০ সালে ফুটবল অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল বার্সেলোনার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি ও তার ক্লাব বার্সেলোনা নিয়ে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বার্সেলোনা ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন লিওনেল মেসি। অন্যদিকে মেসিকে ছাড়তে চায় না বার্সেলোনা। মেসির বার্সা ছাড়ার খবর প্রকাশ হতেই ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলি মেসিকে দলে টানতে আসরে নামে। মেসি-বার্সা পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছিল না। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বার্সেলোনাতে থেকে যান মেসি।
ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার জুলিও সিজারের ঢাকা সফর:
সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা গোলকিপার জুলিও সিজার রাজধানী ঢাকা ঘুরে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে এসেছিলেন তিনি।
করোনাভাইরাসে জর্জরিত একটি বছর ২০২০। পুরো বছরটা কেটেছে অজানা ভাইরাসের আতঙ্কে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে টালমাটাল পুরো বিশ্ব। প্রাণ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন হারিয়েছে তার চিরচেনা রং। স্থগিত হয়েছে বড় বড় ক্রীড়া আসর। না ফেরার দেশে চলে গেছেন অনেক কিংবদন্তিও। চলতি বছর হারানো ক্রীড়াঙ্গনের কিংবদন্তিদের মাঝে রয়েছেন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনা, বাস্কেটবল তারকা কোবি ব্রায়েন্ট, ইতালির পাওলো রসি, অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোন্স, বাফুফের বাদল রায়সহ আরও অনেকে।
এ বছর ক্রীড়াঙ্গনে যাদের হারালাম:
দিয়েগো ম্যারাডোনা:
২৫ নভেম্বর, ২০২০। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন হয়তো কোনোদিনও ভুলবে না দিনটাকে। এদিন পুরো বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে চলে যান ফুটবল ঈশ্বরখ্যাত কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ফুটবলার। দীর্ঘ অসুস্থতা, এরপর অস্ত্রোপচার। হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু হঠাৎ মারা যান এই তারকা। একসময়ের মাঠের তারা থেকে হয়ে গেলেন অসীম আকাশের তারা। তার মৃত্যুশোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ভক্ত-সমর্থকরা।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। তবে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত থাকতে হয় তাকে।
কোবি ব্রায়ান্ট:
বছরের শুরুতেই এক মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান এই কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড়। গত ২৬ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪১ বছর বয়সী কোবি ব্রায়ান্ট ও তার ১৩ বছরের মেয়ে জিজি ব্রায়ান্ট। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে।
বাস্কেটবলে তিনি পাঁচবার জিতেছেন এনবিও চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৮ বার ছিলেন অলস্টার দলের সদস্য। এ ছাড়া দেশের হয়ে ২০০৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদকও জিতেছেন এই কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
চেতন চৌহান:
চলতি বছরের ১৬ আগস্ট ৭৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান ভারতের সাবেক ক্রিকেটার চেতন চৌহান। জুলাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তার। ভেন্টিলেটর সাপোর্ট সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি তাকে।
চেতন চৌহান ভারতের হয়ে খেলেছেন ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে ৪০ টেস্ট আর ৭টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে তিনি রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
ডিন জোন্স:
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকে হতবিহবল করে গত সেপ্টেম্বরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ধারা বিবরণী দিতে গিয়ে মুম্বাইয়ের হোটেলে হঠাৎ স্ট্রোক করেন অস্ট্রেলিয়ান ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স। সেখানেই জীবনের ইতি টানেন এই কিংবদন্তি। ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান ডিন জোনস। মুম্বাইয়ে মৃত্যুর সময় ডিন জোন্সের বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই তারকা ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত মাঠ মাতিয়েছেন। অজিদের হয়ে ৫২ টেস্ট আর ১৬৪টি ওয়ানডে খেলেছেন। টেস্টে তার সংগ্রহ ৩ হাজার ৬৩১ রান। এ ছাড়া ওয়ানডেতে ৬ হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ‘হল অব ফেমে’ স্থান পেয়েছিলেন ডিন জোন্স। ক্রিকেট ছাড়ার পর ধারাভাষ্যের সঙ্গে জড়িত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আইপিএলে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। জোন্স ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
পাওলো রসি:
২০২০ সাল যেন একের পর এক নক্ষত্র হারানোর বছর! ৯ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় ইতালিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি পাওলো রসির। ৬৪ বছর বয়সে মারা যান ১৯৮২ সালে ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক রসি।
রবিন জ্যাকম্যান:
২৫ ডিসেম্বর, ২০২০। বড়দিন উৎসব। এ উৎসবের মাঝেই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেওয়ার খবর আসে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রবিন জ্যাকম্যানের। ৭৫ বছর বয়সে মারা যান সাবেক এই ক্রিকেটার।
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা জ্যাকম্যান জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের শিমলায়। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৪টি। এ ছাড়া ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ১৫টি। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান তিনি। তারপর থেকেই ধারাভাষ্যকার হিসেবে নাম লেখান।
লুক হারপার:
চলে যাওয়ার তালিকায় সর্বশেষ নাম যোগ হলো রেসলার লুক হারপারের। ২৭ ডিসেম্বর মারা গেলেন দর্শকপ্রিয় রেসলিং তারকা লুক হারপার। ৪১ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান এই জনপ্রিয় আমেরিকান রেসলার।
দেশীয় ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া:
বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচন করার কথা ছিলো বাদল রায়ের। তিনি এর আগে বাফুফের সহ সভাপতি হিসেবে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু ২২ নভেম্বর হঠাৎ কিডনি সমস্যা জড়িত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ বছরের মে মাসের শেষ দিকে জাতীয় দলের দুইজন সাবেক ফুটবলারে মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায় ক্রীড়াঙ্গন। ৩০ মে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মৃত্যু হয় গোলাম রাব্বানী হেলালের।
পরদিন ৩১ মে আসে আরেকটা দুঃসংবাদ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এস এম সালাউদ্দিন আহম্মেদ। আশির দশকে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় এই ডিফেন্ডারের। খেলেছেন বিজেএমসি, ওয়ান্ডারার্স ও মোহামেডানে। কলকাতা মোহামেডানেও খেলেছিলেন সালাউদ্দিন।
জাতীয় দলের সাবেক মিডফিল্ডার নুরুল হক মানিকের মৃত্যু হয় ১৪ জুন। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান বাফুফের এই কোচ।
২১ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার একেএম নওশেরুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু খেতাব পাওয়া এই ফুটবলার ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব, ওয়াপদার, ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলেছেন তিনি।