আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ‘লজ্জাজনক’

গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়াকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি। একই সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরাইলের তাবেদারি বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের এক বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইরাভানি বলেন, ইসরাইলের অপরাধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অটল’ সমর্থন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ই মূল কারণ।

কী ছিল প্রস্তাবে

বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ দাবি করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়।

ইরাভানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মানবিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

ইরাভানি এ সময় সতর্ক করে বলেন, ইসরাইলের চলমান অপরাধগুলো ‘গভীরতর যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করছে, যা বৈশ্বিক প্রভাব ফেলতে পারে’।

তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ‘ইসরাইলের দায়মুক্তি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানান।

ইসরাইলের অব্যাহত হামলা ও মানবিক সংকট

এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৪,০৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ১,০৪,২৬৮-এরও বেশি।

অন্যদিকে লেবাননেও আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। সেখানেও সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি লেবানিজ নিহত এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

ইরাভানি এ সময় সিরিয়ার অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি শাসন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সিরিয়ার অবকাঠামো ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পিত নীতি অনুসরণ করছে’।

তিনি সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে একটি রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান।

বিশ্ব রাজনীতি ও সমাধানের পথে বাধা

ইরানের মতে, ইসরাইলের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির মদদ মানবিক প্রচেষ্টা ও আঞ্চলিক শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবে ফের ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।প্রস্তাবটি পরিষদের ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং এতে অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র এটি আটকে দেয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর থেকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অবরুদ্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র।

খসড়া প্রস্তাবে ৯টি ধারা ছিল। যার প্রথমটি সব পক্ষের দ্বারা অবিলম্বে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। প্রস্তাবে গাজায় সব বন্দিদের মুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা এবং বেসামরিক জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, প্রস্তাব গ্রহণের পর তিন সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিবকে এর বাস্তবায়ন নিয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস গাজা থেকে ইসরাইলে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে ইসরাইলি সেনাসহ প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনের বেশি মানুষকে বন্দি করে।

হামাস তাদের এই আক্রমণকে জেরুজালেমের পুরোনো শহরের আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের আগ্রাসী কার্যক্রমের প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এর জবাবে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করে এবং বিমান হামলা চালানো শুরু করে, যা লেবানন এবং সিরিয়ার কিছু অংশেও বিস্তৃত হয়। পরবর্তীতে গাজার ভেতরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৪,০০০ আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। সূত্র: তাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *