যশোরের মণিরামপুরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের এক মাসের বেতনের প্রায় ৫০ লাখ টাকা ঘুস আদায় করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. এনামুল হক। ঘটনার দুই বছর পর ঘুসের সেই টাকা ফেরত পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী শিক্ষকদের পক্ষে যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেন মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাঠি দারুল উলুম মহিলা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে- ২০২২ সালের মার্চ মাসের শুরুতে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মণিরামপুর মহিলা আলিম মাদরাসা, হাজরাকাঠি মহিলা আলিম মাদরাসা, ডুমুরখালি দাখিল মাদরাসা, মনোহরপুর দাখিল মাদরাসা, বালিধা-পাঁচাকড়ি দাখিল মাদরাসা, রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজী আলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অডিট করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. এনামুল হক।
পরিদর্শনকালে ওই ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর পুরো এক মাসের বেতনের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুস নেন তিনি। ঘুস নেওয়ার অভিযোগে ২০২২ সালের ১২ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস ও আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষাভবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ড. এনামুল হকের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন।
পরে দুদক তদন্ত আর এগোয়নি। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা তৎপর হওয়ায় ওই কর্মকর্তার (ড. এনামুল) অনুসারীরা আমাদের পেনশন আটকে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করাতে বাধ্য করেন।
ওই সময় ‘আমরা ঘুস দেয়নি মর্মে প্রস্তুত করা চিঠিতে’ স্বাক্ষর করিয়ে নেন। অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষকরা যা বেতন পান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। তারপরও মাস শেষে হাতেগোনা বেতনের টাকা তুলে সংসারের কেনাকাটা, বাচ্চাদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও ঋণের কিস্তি দেন কিন্তু সেই টাকাগুলো জোরপূর্বক ঘুস দিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ড. এনামুলের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং স্বামীর অবৈধ টাকার জোরে দুইবার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি নিয়ে দীর্ঘকাল ডিআইয়ের একই চেয়ারে বসে সারা দেশের শিক্ষকদের জিম্মি করে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই টাকায় এলাকায় শত শত বিঘা আমের বাগান ও মৎস্য খামার, ঢাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ড. এনামুল হক যশোরে এসে একটি রেস্ট হাউজে উঠে ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে দেখা করতে বলেন। এরপর সরাসরি বলেন, আপনাদের অনেক ফাঁকফোকর আছে। প্রকৃত অডিট হলে কারো বেতন বন্ধ হবে, কারো পেনশন আটকে যাবে, কারো চাকরিটাও যাবে। এজন্য আপনারা সবাইকে (সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের) বলে দেন বাড়াবাড়ি না করে এক এমপিও (এক মাসের বেতন) দিতে, বাকিটা আমি ঠিক করে নেব। এরপর গভীর রাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে হরেকরকম নাস্তা ও ১০-১২ রকম খাবারের মধ্য দিয়ে আপ্যায়িত হয়ে আজব অডিট সম্পন্ন করেন।
তিনি অডিটকালে ঘুস কোথায় কোথায় ভাগাভাগি হবে সেটাও বলে গেছেন; যা রেকর্ড আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতায় দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার এবং প্রতিবাদ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য শিক্ষকরা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক ঘুসের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে মানবিক আবেদন করছি।