দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে ২০ বছরের চেষ্টার পর চলতি সফরেই প্রথম জয়ের স্বাদ পাওয়া বাংলাদেশ সিরিজ জয়েরও ইতিহাস গড়ল।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় ৩১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ৩৮ রানে জয় পায় তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলটি।
বুধবার শেষ ম্যাচে ‘অঘোষিত ফাইনালে’ স্বাগতিকদের ১৫৪ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৪১ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে টাইগাররা।
১৫৫ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে অনবদ্য ব্যাটিং করে ১২৫ বলে ১২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান লিটন দাস ও তামিম ইকবাল।
আর মাত্র ২ রান হলেই ফিফটি পূর্ণ হতো লিটনের। দলের জয়ে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৮ রান। হাতে ছিল ২৯.১ ওভার। খেলার এমন অবস্থায় বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন লিটন। ২০.৫ ওভারে দলীয় ১২৭ রানে ৫৭ বলে ৮টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৮ রান করেন লিটন।
এরপর সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। দলের জয়ে ৮২ বলে ১৪টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ৮৭ রান করেন তামিম।
বুধবার তিন ম্যাচ সিরিজের ‘অঘোষিত ফাইনালে’ আগে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্টস পার্কে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো সূচনা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার কাইল ভেরাইনা ও কুইন্টন ডি কক। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ৬.৫ ওভারে ৪৬ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন।
ভেরাইনা এবং ডি ককের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক। আগের ম্যাচে ৬২ রান করা সাবেক এই অধিনায়ককে এদিন ১২ রানে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। তার বিদায়ে ৬.৫ ওভারে ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফ্রিকা।
এরপর জোড়া আঘাত হানেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তার শিকার হয়ে মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন কাইল ভেরাইনা ও ওপেনার জানেমান মালান।
তিন ম্যাচ সিরিজেরে প্রথম খেলায় ওপেনিংয়ে ব্যাট করা ভেরেইনাকে ২১ রানে এলবিডব্লিউ করেছিলেন তাসকিন। বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ বলে ৯ রান করার সুযোগ পান দক্ষিণ আফ্রিকার এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান।
তাসকিনের পর দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টিম্বা বাভুমা। ১১ বল খেলে মাত্র ২ রানে ফেরেন প্রোটিয়া এই অধিনায়ক। তার বিদায়ে ১৫.৫ ওভারে ৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায় আফ্রিকা।
সাকিবের পর আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। তার বলে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ভেন দার ডুসেন। ১৮.১ ওভারে দলীয় ৮৩ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন ডুসেন।
এরপর আবার দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। তার শিকার হয়ে ফেরেন সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা ডুয়াইন পিটোরিয়াস। তাকে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন তাসকিন।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা পেসার কাগিসো রাবাদাকে আউট করে ৫ উইকেট শিকারের সন্তুষ্টিতে মাঠেই সিজদা দেন তাসকিন।
২৮.৬ ওভারে ১২৬ রানে ৮ উইকেট পতনের পর মনে হয়েছিল দেড়শর আগেই অলআউট হয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজ স্কোর মোটাতাজা করতে ব্যাটিংয়ে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন।
নবম উইকেটে লুঙ্গি এনগিডিকে সঙ্গে নিয়ে ৩৩ বলে ১৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন মহারাজ। সাকিব আল হাসানের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন লুঙ্গি।
শেষ দিকে স্কোর মোটাতাজা করতে যাওয়া কেশভ মহারাজকে রান করে সাজঘরে ফেরান তামিম-মুশফিক। ৩৯ বলে চার বাউন্ডারিতে ২৮ রান করে কেশভ মহারাজের বিদায়ে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭ ওভারে ১৫৪/১০ রান (জানেমান মালান ৩৯, কেশভ মহারাজ ২৮, ডুয়াইন পিটোরিয়াস ২০, ডেভিড মিলার ১৬; তাসকিন আহমেদ ৫/৩৫, সাকিব ২/২৪)।
বাংলাদেশ: ২৬.৩ ওভারে ১৫৬/১ রান (তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮, সাকিব ১৮*)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।