ইউক্রেইনে আগ্রাসনের পট প্রস্তুতের আরেক বাহানায় রাশিয়া ঢাকঢোল পিঠিয়ে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে। কোনও প্রমাণ না দিয়েই একটিমাত্র শব্দকে কেন্দ্র করে অভিযোগ তুলছে তারা। আর তা হচ্ছে ‘গণহত্যা’।
ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মঙ্গলবার বলেছেন, সেখানে আজ যা ঘটছে তা ‘গণহত্যা।’
পুতিনের এ কথার পর থেকেই ঊর্ধ্বতন রুশ কর্মকর্তারা এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও ‘গণহত্যা’ কথাটির প্রতিধ্বনি করে চলেছে। রাশিয়ার কূটনীতিকরা পূর্বসীমান্ত অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিক নিধন সংক্রান্ত একটি নথি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দিয়েছেন।
গত শুক্রবার ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলের রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দাবি করেছে যে, ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর হামলা আসন্ন। নারী ও শিশুদেরকে এলাকা থেকে সরে যেতে বলেছে তারা। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে ইউক্রেইনের সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে লোকজনকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতেও দেখানো হয়েছে।
এসবই রাশিয়ার কূটচাল এবং পরিস্থিতিকে অতিরঞ্জিত করে আগ্রাসনের অজুহাত দাঁড় করানোর ছুতো বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ক্রেমলিন বহুদিন ধরেই ইউক্রেইন সরকারের বিরুদ্ধে জাতিগত রুশ এবং রুশ-ভাষী নাগরিকদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ করে আসছে। ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণেও তোলা হয়েছিল এই অভিযোগ।
এখন রাশিয়ার আবার সেই একই ধরনের ভাষার প্রয়োগ এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরাসরি ‘গণহত্যার’ অভিযোগ তোলা থেকে যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে বিশ্লেষক এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ভাষ্য, এটি আবারও ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালানোর পাঁয়তারা হয়ে থাকতে পারে।
তবে ‘গণহত্যা’ শব্দটি চাউর করা কেবল যুদ্ধ বাধানোর অজুহাত নয়, তার চেয়েও বেশিকিছুরই আভাস দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আর তা হচ্ছে, এই কথাটির মধ্য দিয়ে বৈরি পশ্চিমা আধিপত্যের এ বিশ্বে মস্কোর এই আন্তরিক বিশ্বাসেরই প্রতিফলন ঘটছে যে, সাবেক সোভিয়েট রিপাবলিকের জনগণের সঠিক রক্ষকর্তা রাশিয়াই।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মস্কোর প্রভাব বলয়ের মধ্যে কোনওরকম বিচ্যুতি সামগ্রিকভাবে গোটা রুশ জনগণের ওপর হামলার সামিল বলেই গণ্য, বিশেষ করে ইউক্রেইনে, যে অঞ্চলকে পুতিন কার্যকরভাবে রাশিয়ান বলেই বিবেচনা করেন।
ফলে গণহত্যার দাবিটি তখন জাতিগত রাশিয়ান সাম্রাজ্যজুড়ে রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং শক্তি প্রয়োগ করে সেই সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার জাহির করার একটি পন্থা হয়ে দাঁড়ায়, যে সাম্রাজ্য রাশিয়ার সুনির্দিষ্ট সীমানার বাইরেও অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী সোমবার বলেছে, ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর অন্তর্ঘাতকরা সশস্ত্র যানে করে রাশিয়ার ভূখন্ডে ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ইউক্রেইন এই অভিযোগকে ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর আরও দাবি, ইউক্রেইনের নাশকতার চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার সময় ৫ জন নিহত হয়েছে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলো সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে জানায়, রোস্তভ এলাকার কাছে ইউক্রেইনের ভূখন্ড থেকে রাশিয়ার সীমান্ত লঙ্ঘনের চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে রুশ সেনা ও সীমান্তরক্ষীরা। ইউক্রেইনের সশস্ত্র যানও ধ্বংস করা হয়েছে।
ওদিকে, ইউক্রেইন সঙ্গে সঙ্গেই এ খবর প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এসবই ভুয়া। যে রোস্তভ এলাকায় এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে ইউক্রেইনের কোনও বাহিনীর উপস্থিতিই নেই।