ডলার বাঁচাতে আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম সুইফটের বাইরে নতুন কোনো ‘পেমেন্ট সিস্টেমে’ যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
সেজন্য হংকং ও সিঙ্গাপুরের প্রস্তাবিত নতুন ‘পেমেন্ট সিস্টেমের’ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এসে বিকল্প নতুন পেমেন্ট সিস্টেমের বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে কিছু ইনফরমেশন এসেছে, সুইফটের বাইরে নতুন কিছু পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করেছে হংকং ও সিঙ্গাপুর। যেগুলো মাচ মোর কমফোর্টেবল। সেগুলো একটু এক্সপ্লোর করতে বলা হয়েছে।”
নতুন পেমেন্ট সিস্টেমগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওখানে ছিলেন। উনি ইতোমধ্যে এগুলো নিয়ে বসেছেন। উনাকে কয়েকদিন সময় দেওয়া হয়েছে।”
ইউক্রেইনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে নানারকম অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট হল আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বার্তা আদানপ্রদানের একটি দ্রুত ও নিরাপদ আন্তর্জাতিক পরিকাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম এই পরিষেবার দেখভাল করে থাকে।
১৯৭০ এর দশকে যাত্রা শুরু করা এ সমবায় পরিষেবা এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। দুইশর বেশি দেশের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন সুইফটে যুক্ত। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৩৮ মিলিয়ন লেনদেন হয়েছে, যা ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের লেনদেন সুবিধা দিয়েছে।
রাশিয়াকে সুইফট থেকে বাদ দেওয়ায় বিপদে পড়েছে অন্য অনেক দেশও। রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সম্ভব না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যারা রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে, তাদের বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছে।
যুদ্ধের জেরে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও বিঘ্নিত হচ্ছে, তাতে একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অন্যদিকে চড়ছে ডলারের দর। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম দেওয়ার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “হংকং থেকে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ডিং তারা নিয়ে আসছে। শুধু বাংলাদেশের জন্য না, তারা বলছে ‘তোমরা যদি আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে আস, তাহলে তোমরা যখন এলসি ওপেন করবে, সেই এলসির বিপরীতে আমরা খুবই কম রেট অব ইন্টারেস্টে প্রডিউসারকে পে করে দেব।’
“‘তারপর তোমরা যখন এক্সপোর্ট (রপ্তানি) করবে, আইদার তুমি আমাকে ক্যাশে পরিশোধ করতে পার, অথবা তুমি যদি এক্সপোর্ট কর… এগুলো গার্মেন্টসের জন্য খুবই সুবিধা। যখন এক্সপোর্ট করবে তখন আমার যে টাকাটা তোমার এক্সপোর্ট পেমেন্টের, সেটা আমরা কাছে যাবে, আর তোমার একসেস টাকা তোমার দেশে চলে যাবে। তাহলে আমাদের দেশের ডলার ইনটেক রয়ে গেল’।”
এ রকম একটি ব্যবস্থার প্রস্তাব সিঙ্গাপুর থেকেও দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এটা নিয়ে কাজ করছে। আমি গতকাল তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যাতে আমরা একটু কমফোর্টলি যেতে পারি।”
আরটিএ নীতি অনুমোদন
এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবেলা করে রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) নীতি-২০২২ এর বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের খসড়া অনুমোদন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি, বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।
“আমরা আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। তাই এর জন্য নীতি গ্রহণ করা হয়েছে (আরটিএ স্বাক্ষর করা)।”
মন্ত্রিসভা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে একটি ভাষা গবেষণা ট্রাস্ট গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০২২ এর খসড়ায়ও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “ট্রাস্টের নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা গবেষণা ট্রাস্ট’, যার অধীনে একটি স্থায়ী তহবিল তৈরি করা হবে। ভাষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য স্থায়ী তহবিল থেকে বৃত্তি ও ফেলোশিপ দেওয়া হবে।”
এছাড়াও বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্টের (বিবিআইএন-এমভিএ) অধীনে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট কার্গো পরিবহনের অপারেটিং পদ্ধতির বিষয়ে তার পূর্বের সিদ্ধান্ত বাতিল করে মন্ত্রিসভা নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে।