খেলাধুলা

ঢাকার জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল নাসির

অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কার্যকর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে বিপিএল শুরু করল ঢাকা ডমিনেটর্স।

নাসির হোসেন ফিরলেন ফেরার মতো করেই! বিপিএলের গত আসরে কেউ দলে নেয়নি তাকে। এবার শুধু দলই পাননি, তার ওপর নেতৃত্বের ভারও সঁপে দেয় ঢাকা ডমিনেটর্স। নতুন দলের হয়ে নতুন মৌসুমের শুরুতেই নায়ক অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। এমন চোখধাঁধানো কোনো পারফরম্যান্স অবশ্য করেননি। তবে ব্যাটে-বলে যা করলেন, দলের জয়ে সেটুকুই হয়ে থাকল গুরুত্বপূর্ণ।

বিপিএলের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শুরু হলো ঢাকা ডমিনেটর্সের পথচলা।

বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেটের পর ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন নাসির। ২০১৯ সালের পর বিপিএলে প্রথম খেলতে নেমেই তিনি ম্যাচ সেরা।

আগের দিনের মতোই দিনের প্রথম ম্যাচে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয় ব্যাটসম্যানদের। কন্ডিশন ও উইকেট, সবই ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন। দুপুর বেলায়ও শের-ই-বাংলায় ছিল যেন সন্ধ্যার আবহ। কুয়াশার দাপটে চারপাশ ছিল ঘোলাটে। আলোকস্বল্পতায় ম্যাচ শুরু হয় আধঘণ্টা দেরিতে। উইকেট যথারীতি মন্থর, শট খেলা কঠিন। এসবের সঙ্গে যোগ হয় খুলনার ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যার মিছিল। সব মিলিয়ে তারা আটকে যায় মোটে ১১৪ রানে।

খুলনার কোনো ব্যাটসম্যান করতে পারেননি ২৫ রানও। কুঁচকির চোটের কারণে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে না পারা তামিম ইকবাল ফেরার ম্যাচে ১৫ বল খেলে করতে পারেন কেবল ৮ রান।

ঢাকার হয়ে অভিজ্ঞ পেসার আল আমিন হোসেন ৪ উইকেট নেন ২৮ রানে।

রান তাড়ায় খুব সাবলিল ছিল না ঢাকাও। তবে নাসির টিকে থাকায় বড় কোনো বিপাকে পড়তে হয়নি তাদের। জয়ের দেখা পায় তারা শেষ ওভারের প্রথম বলে।

উইকেটের মন্থরতা স্পষ্ট হয়ে যায় ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই। তাসকিন আহমেদের মতো গতিময় পেসারের বলও থমকে আসে ব্যাটে। আরেক প্রান্তে আক্রমণ শুরু করেন ঢাকা অধিনায়ক নাসির হোসেন।

ঢাকার জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল নাসির
প্রথম ৩ ওভারে খুলনা উইকেট না হারালেও রান করতে পারে স্রেফ ৭। এর মধ্যে এক দফায় জীবন পান তামিম। নিজের বলে ফলো থ্রুতে নিচু হয়ে তাসকিন ক্যাচ নিতে পারেননি অল্পের জন্য।

পরের ওভারেই নাসিরের ফ্লাইটেড একটি সোজা ডেলিভারি ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড খুলনার পাকিস্তানি ওপেনার শারজিল খান (১১ বলে ৭)।

মুনিম শাহরিয়ার ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই মারেন বাউন্ডারি। পরের ওভারে তিনিও আউট বাজে এক শটে। আল আমিনের হোসেনের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালান তিনি একদম জায়গায় দাঁড়িয়ে।

চারে নেমে আজম খান ওই ওভারেই দুটি বাউন্ডারি মেরে ইঙ্গিত দেন প্রতি আক্রমণের। কিন্তু আরেক প্রান্তে বিদায় নেন তামিম। খুলনা উইকেট হারায় টানা তিন ওভারে।

আরাফাত সানির ডেলিভারিটির যদিও প্রাপ্য ছিল চার বা ছক্কা। লেগ স্টাম্পের ওপর শর্ট ডেলিভারি। তামিম সেটিই আলগো করে তুলে দেন স্কয়ার লেগের হাতে। পিচ করে বল একটু থেমে আসতে পারে অবশ্য। তার পরও বাজে শট।

পাওয়ার প্লেতে খুলনার রান ৩ উইকেটে ৩২।

আজম খান ও ইয়াসির আলি চৌধুরি চেষ্টা করেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু এই জুটিও থামে বাজে শটেই। আরাফাত সানির ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে শারজিলের মতোই ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড আজম (১২ বলে ১৮)।

ইয়াসির ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের জুটিতে এরপর উইকেটের পতন ঠেকানো গেলেও রানের গতিও থমকে যায়। বাউন্ডারিবিহীন ৫ ওভারের পর সানির বলে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন সাইফ। ওই শটের আগ পর্যন্ত তার রান ছিল ১৮ বলে ৫।

পরের ওভারে নাসিরের বলে বাউন্ডারি মারেন সাইফ, মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ইয়াসির। জুটি থেমেও যায় ওই ওভারেই। নাসিরকে মিড উইকেট দিয়ে স্লগ করা চেষ্টা করেন ইয়াসির, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে যায় শর্ট থার্ড ম্যানে। অধিনায়কের ২৫ বলে ২৪ রানই হয়ে থাকে দলের সর্বোচ্চ।

একটু পর সাইফ বিদায় নেন ২৮ বলে ১৯ রান করে। সাতে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি সাব্বির রহমান (১১ বলে ১১*)। শেষ ওভারে টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় রান একটু বাড়ান ওয়াহাব রিয়াজ। ওই ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে আল আমিন পূর্ণ করেন চার উইকেট।

রান তাড়ায় খুব তাড়াহুড়ো না করে একটু একটু করে এগোতে থাকে ঢাকা। তবে চতুর্থ ওভারে খুলনার ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেনের বলে গাতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান ঢাকার পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানআহমেদ শেহজাদ।

আরেক ওপেনার দিলশান মুনাবিরা ও তিনে নামা সৌম্য সরকার এরপর দলকে এগিয়ে নেন। চতুর্থ ওভারে অবশ্য বড় নাটক হয়ে যায়। নাসুম আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে রিভিউ নেন সৌম্য। এডিআরএস-এ তৃতীয় আম্পায়ার বহাল রাখেন মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।

সৌম্য সেই সিদ্ধান্তে বেশ চটে যান। আম্পায়ারদের সঙ্গে বেশ উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। তামিম ইকবাল গিয়ে চেষ্টা করেন তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যেতে। কিন্তু এরপর তৃতীয় আম্পায়ার ইংল্যান্ডের ডেভিড মিল্নস আবার রিপ্লে দেখে ঘোষণা করেন ‘নট আউট।’ এবার আম্পায়ারের সঙ্গে বেশ ক্ষিপ্ত অবস্থায় কথা বলতে দেখা যায় তামিমকে।

উইকেট না পড়লেও প্রথম ৭ ওভারে ঢাকার রান আসে ৩৩। ওয়াহাব রিয়াজ আক্রমণে আসার পর বাড়ে রান। পাকিস্তানি পেসার শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। পরের বলে ওয়াইডসহ বাই থেকে আসে ৫ রান। এরপর করেন ‘নো’ বল, সঙ্গে ১ রান আসে বাই থেকে। ‘ফ্রি’ হিট পেয়ে পরের বলে ছক্কা মারেন সৌম্য। সব মিলিয়ে ওয়াহাবের ১ বলেই রান আসে ১৪!

পরের বলেই অবশ্য জঘন্য এক শটে উইকেট বিলিয়ে দেন সৌম্য (১৩ বলে ১৬)। পরের ওভারে সাইফ উদ্দিন এলবিডব্লিউ করে দেন মুনাবিরাকে। গত অক্টোবরে সাবেক ক্রিকেটারদের টুর্নামেন্ট রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে খেলা ব্যাটসম্যান ২২ রান করেন ২৮ বলে।

মোহাম্মদ মিঠুন এরপর উইকেটে অস্বস্তিময় কিছু সময় কাটিয়ে বিদায় নেন ১৪ বলে ৮ রান করে। ১২ ওভারর শেষে ঢাকার রান তখন ৩ উইকেটে ৬৬। তখনও সম্ভাবনা জিইয়ে আছে দুই দলেরই। তবে আফগান ব্যাটসম্যান উসমান ঘানিকে নিয়ে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান নাসির।

ঘানি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। তবে জয় তখন অনেকটাই নিশ্চিত। জয়ের কাছে গিয়ে একটি সুযোগ দেন নাসিরও। সেই ক্যাচ নিতে পারেননি খুলনা অধিনায়ক ইয়াসির। শেষ ওভারের প্রথম বলে নাসিরের বাউন্ডারিতেই ধরা দেয় জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১১৩৮/৮ (তামিম ৮, শারজিল ৭, মুনিম ৪, আজম ১৮, ইয়াসির ২৪, সাইফ উদ্দিন ১৯, সাব্বির ১১*, নাহিদুল ৭, ওয়াহাব ১০, ফন মিকেরেন ০*; তাসকিন ৪-০-১৪-০, নাসির ৪-০-২৯-২, আল আমিন ৪-০-২৮-৪, সানি ৪-০-২৪-২, মুক্তার ৪-০-১৫-০)।

ঢাকা ডমিনেটর্স: ১৯.১ ওভারে ১১৪/৪ (মুনাবিরা ২২, শেহজাদ ৪ আহত অবসর, সৌম্য ১৬, মিঠুন ৮, নাসির ৩৬*, উসমান ১৪, আরিফুল ৩*; নাসুম ৪-০-২৩-১, ফন মিকেরেন ৪-০-১৮-১, নাহিদুল ৩.১-০-২২-০, সাইফ ৪-০-২২-২, ওয়াহাব ৪-০-৩২-১)।

ফল: ঢাকা ডমিনেটর্স ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসির হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *