তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০ আসনও পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’- শীর্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন এতে সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
ফখরুল বলেন, বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে, খায়রুল হকের ওপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান তারা বাতিল করে দিল। কেন? আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ত্রিশটি আসনও পাবে না।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা বলে নির্বাচন তাদের অধীনে হবে। তারা ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা ভোট দেওয়াবে, তাদের মতো করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি তারা ভোটারদের এখনো বলে, ভোট কাকে দেবে। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও, তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেয় না।
ফখরুল বলেন, তারা আমাদের বলে, তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে। তিনি কোন বাধা দেবেন না। আমরা ভাবলাম, বোধ হয় শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কী করা যাবে বলেন! ভুতের মুখের রাম নাম! আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আবার বলছে তারা সুন্দর ভোট করবে। তাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। আহারে কী আবদার! শিয়ালের কাছে বারবার কুমিরের বাচ্চা দেওয়া যাবে না। বারবারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দেব না।
তিনি বলেন, এবার মানুষ জেগে উঠেছে। ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’। কীভাবে তাদের বিশ্বাস করব? সুবর্ণচরে একজনকে শুধু ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে অকথ্যভাবে নির্যাতন করা হয়। এভাবে তারা অসংখ্য মা-বোনকে বেইজ্জত করেছে। আজ শ্রমিক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারেন না। বাজারে গেলে চাল কিনতে পারেন না, ডাল কিনতে পারেন না, মাংস কিনতে পারেন না, সবজি কিনতে পারেন না। তারা ১০ টাকা চাল দেবে বলেছিল। এখন ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল। কোনো চাকরি হয়নি। তাদের লোকেদের কাছ থেকে তারাই ২০-৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছে।
দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে আনার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে এলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টিভ পাবে। কত মজা!
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ, আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারো বলছি, ভালো ছেলের মতো, সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন। যদি ভালোই ভালোই শুনে পদত্যাগ করেন, তাহলে তো ভালো। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আট বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। আমরা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
পদযাত্রায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।
এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ আজাদ, জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজীম সুমন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান, জেলা বিএনপির সদস্য মো. গোলাম মোমিত ফয়সাল, জেলা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষকদল, শ্রমিকদল, মৎসজীবী দল, তাঁতী দল ও জাসাসের উদ্যোগে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এ পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীসহ পাঁচ জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।