রাজনীতি

তফশিল প্রত্যাখ্যান বিএনপিসহ সমমনাদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চলমান অবরোধ শেষে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল পালনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। যা আজ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এদিকে তফশিল প্রত্যাখ্যান করে আজ দেশব্যাপী অর্ধদিবস (৬টা-২টা) হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলনও সারা দেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করবে। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিসহ আরও বেশ কয়েকটি দলও তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় তফশিল ঘোষণার পরপরই এর প্রতিবাদে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযেগী সংগঠনের নেতাকর্র্মীরা। বিক্ষোভ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টিও। বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্রমঞ্চের নেতারা জানান, আজ অবরোধের পাশাপাশি দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

তফশিল ঘোষণার পর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তফশিল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফশিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফশিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনামার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফশিল জনগণ মানে না। এই নীলনকশার নির্বাচনের তফশিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল-বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারও হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে। এই সংকটের কারণে আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। অতি দ্রুতই আওয়ামী নাৎসি সরকারের পতন ঘটবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করবে জনগণ।’ রিজভী আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন-অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। একথা তো ডাহা মিথ্যা, ভন্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার শামিল।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ব্যতীত দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল একতরফা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। কার জন্য এই নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে? মানুষ রাজপথে নেমেছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, ১৮ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি। এই দাবিকে বন্দুকের নলের মুখে উড়িয়ে দিয়ে একতরফা পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা। আর এই নির্বাচন কমিশন সব জেনেশুনেই দেশকে এক গভীর সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে তফশিল ঘোষণা করল। কারণ বর্তমান কমিশন নিশিরাতের ভোটের সরকারের মনোনীত সিলেকশন কমিশন। তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জনগণের কেউ নন। এই কমিশনকে কেউ মানে না। নির্বাচন কমিশন মূলত আওয়ামী কমিশন।’

রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ, বিরোধপূর্ণ নির্বাচনের চরম ধৃষ্টতা দেখানোর যে ঝুঁকি নিল জনগণ এর পালটা জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ নয়। তফশিল দিলেন আর পুলিশি ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করলেন, এত সহজ নয়। এই দিবাস্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। এসব তফশিল-টপশিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা। রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখেন। গোটা দেশ অচল হয়ে গেছে। অবরোধে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ঢাকা। সব পোশাকি-অপোশাকি রক্ষীবাহিনী-লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়েও কিছুই করতে পারছেন না। তারাও জনগণের আন্দোলনে আত্মসমর্পণ করবে।’

সূত্রমতে, বুধবার তফশিল ঘোষণার পর বিভিন্ন জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাদের করণীয় সম্পর্কে নানা দিকনির্দেশনা দেন। এছাড়াও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও সভা করেন দলটির হাইকমান্ড। সেখানে চলমান অবরোধ শেষে রোববার থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর লাগাতার হরতাল বা অবরোধ পালনের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

তফশিল প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টিসহ সমমনা দলগুলো। প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াতে ইসলামীও।

সরকার নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে জনগণকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে।

অলি আহমদ বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই। কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। বর্তমান সিলেকশন কমিশন (নির্বাচন কমিশন) বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়ার মতো একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আর ন্যূনতম মনুষ্যত্ব থাকল না।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ জানান, এ তফশিল গণতন্ত্রের সঙ্গে তামাশা। জনগণ এ তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, ইসির একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারা দেশে হরতাল পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

তফশিল প্রত্যাখ্যান করে রাতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। একই সঙ্গে আজ নির্বাচন কমিশনের প্রতি লাল কার্ড প্রদর্শন করে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

গণদাবি উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *