ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ‘দখল’, ধানের শীষের এজেন্টদের ‘বের করে দেওয়া’ এবং সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্র ‘ঢুকতে না দেওয়ার’ অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “ভোট শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনের ২০৩টি ভোট কেন্দ্র দখলে নিয়ে বিএনপির এজেন্টদেরকে মারধর করে নিয়োগপত্র ছিঁড়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়।
“কিছুক্ষণ আগে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, সকল ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-১ আসনেও একই অবস্থা।”
দুই আওয়ামী লীগ নেতা সাহারা খাতুন ও মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ইভিএমে ভোট চলছে।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১, ১৭, ৪৩ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
আর কাজীপুর উপজেলা ও সদর উপজেলার মেছড়া, রতনকান্দি, বাগবাটি, ছোনাগাছা ও বহুলী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “দুই আসনে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এজেন্টদের বের করে দেওয়ার এই সব ঘটনার সময়ে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তারা সহায়তাও করেছে।”
ঢাকা-১৮ আসনে ভোটের আগের রাত থেকে ‘গাড়ি বোঝাই করে বহিরাগতদের নিয়ে এসে কেন্দ্রে জড়ো’ করা হয়েছে এবং কেন্দ্রের বাইরে অলি-গলিতে পাহারা বসিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে ‘বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রিন্স।
তিনি বলেন, “আওয়ামী সন্ত্রাসীর বাধা অতিক্রম করে কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে জোর করে নৌকা প্রতীকের বাটন টিপে ভোট ছিনতাই করে নিচ্ছে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
এসব কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার ‘কেড়ে নিচ্ছে’ মন্তব্য করে প্রিন্স বলেন, ‘‘দেশের মালিকানা কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলোকে দখলে নিয়ে দেশে মাস্তানতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই মাস্তানতন্ত্রের স্টেক হোল্ডারদেরকে দিয়ে হোন্ডা-গুণ্ডা-ডান্ডার নির্বাচন করে পুরো জাতিকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
“আমরা বলতে চাই, উপনির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যর্থতায় সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশন ও প্রশাসনকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, শিরিন সুলতানা, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, খন্দকার মাশুকুর রহমান, অমলেন্দু দাস অপু, ফরিদা ইয়াসীন, সিমকী ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ মিছিল বের করে নেতা-কর্মীরা। মিছিলের পর তারা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নয়া পল্টনে আয়কর কার্যালয়ের সামনে রাখা আয়কর বিভাগের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।