রাজনীতি

দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সাথে দেশসেবা করতে নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সাথে দেশের সেবা করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি হিসাবে আমরা ‘শান্তিতে বিশ্বাস করি, এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি। তবে কখনো বাইরে থেকে শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার সক্ষমতা আমরা ইতিমধ্যেই অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, ‘দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সমাপনী রাষ্ট্রপতি প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী (বিএমএ) এর মূল আয়োজনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। কুচকাওয়াজ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী নবীন সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এদেশের সন্তান, জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সকলকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। যে কোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

শেখ হাসিনা সকল নবীন অফিসারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের উপর ন্যস্ত হলো দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে তোমাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের পেশাগত জীবনের প্রধান ব্রত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বিএমএতে প্রশিক্ষণের সকল প্রকার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে। একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এই আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি  আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে জাতির পিতা যে মিলিটারি একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সফল বাস্তবায়িত রূপ আজকের এই বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালেই প্রণয়ন করেন আমাদের ‘প্রতিরক্ষা নীতি’। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা প্রণীত সুদূর প্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীতে ৩টি নতুন পদাতিক ডিভিশন ও প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান এবং গোলন্দাজ কোরে মাঝারি ও দূরপাল্লার এমএলআরএস রেজিমেন্ট। আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় সোরাড, ভিসোরাড ও সর্বাধুনিক অরলিকন মিসাইল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষায় সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল সরঞ্জামাদি ছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, বিমান, মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট এবং আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে।

এ সকল অস্ত্র-সরঞ্জামাদির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও বিপুল সংখ্যক নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়াও আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি ও ভৌত কাঠামোর সংযোজন ও সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে মহিলা অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

তিনি পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের দিনটি তোমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির জন্য আজ একটি স্মরণীয় দিন। ৩ বছর মেয়াদি কঠোর প্রশিক্ষণ সমাপনান্তে আজ ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র প্যালেস্টাইন ও শ্রীলঙ্কার প্রশিক্ষণার্থীরা ‘লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে কমিশন লাভ করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজ তোমাদের সুসজ্জিত, সুশৃঙ্খল ও আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ দেখে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি। এজন্য তোমাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। নবীন নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং আজকের প্যারেডকে সামগ্রিকভাবে সাফল্যম-িত করার জন্য একাডেমির কমান্ড্যান্ট, সংশ্লিষ্ট সকল অফিসাদের ধন্যবাদ জানান। প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল ও সাফল্যের জন্য পদকপ্রাপ্ত ক্যাডেটদেরকেও তিনি অভিনন্দিত করেন এবং কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারগণের গর্বিতমাতা-পিতা ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতি ক্যাডেটদের কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃত করেন।

সর্ব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার আব্দুল্লাহ আল ইসলাম ‘সোড অব অনার’ এবং কোম্পানী জুনিয়র আন্ডার অফিসার ইমরুল কায়েস সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণ পদক’  লাভ করেন।

সেনাপ্রধান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *