নয় মাস পর দেশে ফিরেই অপহরণ ও হত্যার হুমকির মামলায় গ্রেপ্তার সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদারকে জামিন দিয়েছে আদালত।
রনকে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক আশেক ইমাম আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এ সময় সিকদার পরিবারের ছেলেকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়নি বলে এ আদালতের সহকারী পিপি আজাদ রহমান জানান।
শুক্রবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরপরই রন সিকদারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, “রন হক সিকদার তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা আসার সাথে সাথে বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটিই মামলা আছে; সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার দুবাইর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মারা যান।
জয়নুল হক সিকদার ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। আর তার ছেলে রন হক সিকদার ওই ব্যাংকের পরিচালক।
এই গাড়িতে করেই পুলিশ রন হক সিকদারকে আদালতে নিয়ে যায়এই গাড়িতে করেই পুলিশ রন হক সিকদারকে আদালতে নিয়ে যায়রন ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া এবং অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত বছর ১৯ মে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়।
এরপর গত ২৫ মে সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই ভাইয়ের ব্যাংককে পাড়ি জমানোর খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে।
দুই ভাইর বিদেশে পাড়ি জমানোর খবরে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রন হক সিকদারের একটি গাড়ি জব্দ করে।
গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, রন হক সিকদার গত বছরের ৭ মে সকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিসহ গুলশানে এক্সিম ব্যাংকে যান। তারা তাদের প্রস্তাবিত ঋণের টাকার বিপরীতে ‘কো-লেটারেল’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের রূপগঞ্জ কাঞ্চন প্রস্তাবিত আদি নওয়াব আসকারী জুট মিলটি পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যান এমডি হায়দার আলী ও অতিরিক্ত এমডি ফিরোজকে।
ওই স্থানটি পরিদর্শন করে জায়গাটির বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে গ্রাহকের বন্ধকী মূল্যের বিশাল ব্যবধান হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি দ্বিমত পোষণ করেন।
এর জের ধরে ‘কৌশলে’ এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পূর্বাচলে নিয়ে ‘হত্যার উদ্দেশে গুলিবর্ষণ’ এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেখান থেকে বনানী ১১ নম্বরে সিকদার হাউজে নিয়ে ‘হেনস্তা করা হয়’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, জমির দাম কম বলায় রন ও দীপু এক্সিম ব্যাংকের এএমডি ফিরোজকে ‘মারতে উদ্যত হলে’ তিনি মাফ চেয়ে প্রাণে বাঁচেন।
“রন হক সিকদার ও দিপু সিকদার (এক্সিম ব্যাংকের) এমডিকে প্রজেক্টের সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী আছে ব্যক্ত করে তাদের সাথে থাকা অস্ত্র তাক করে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।”
এক্সিম ব্যাংকের এমডি, এএমডি ও দুই চালককে প্রায় ৫ ঘণ্টা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
জয়নুল হক সিকদারের গড়া সিকদার গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে আছে ব্যাংক ও বীমা, বিদ্যুৎ, ইকনোমিক জোন, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মত নানা খাতে।
এর সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকনোমিক জোন, সিকদার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস।
কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠান করেছেন জয়নুল হক সিকদার। ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট সিকদার গ্রুপেরই একটি প্রকাশনা।