নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর থেকে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনাও ছিল। অবশেষে অভিভাবকদের দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে এ মাসের শুরুতে সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিল সরকার। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী তারা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি মিডটার্ম ও চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার। মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলবে। এতে ছয়টি সেশন থাকবে। চার ঘণ্টা থাকবে ব্যবহারিক।
জানা গেছে, রোববার শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। সে অনুযায়ী, শ্রেণিভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বছরে দুটি। প্রতি বিষয়ে ৫ ঘণ্টার লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে আগের পদ্ধতিতে আর পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষাকে এখানে ‘মূল্যায়ন’ বলা হবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, রোববার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় পরীক্ষা পদ্ধতি ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরেকটি সভা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মার্কিং (চিহ্নিত) করার নিয়ম থাকবে না। ‘রিপোর্ট ভালো’, ‘অর্জনের পথে’ এবং ‘প্রাথমিক পর্যায়’ এমন তিন ভাগে ফলাফল হবে। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে।
খসড়া অনুযায়ী, মিডটার্ম ও বার্ষিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে নতুন কারিকুলামের আলোকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে। আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা হবে নিজ স্কুলে।
চলতি বছরের জুন থেকে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন হবে স্কুলে। এর আগেই সব চূড়ান্ত হবে জানিয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেছেন, অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে খসড়া করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।
চলতি মাসের শুরুতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চ‚ড়ান্ত করতে সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)। কমিটিতে সদস্য হিসাবে কাজ করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান। এছাড়া আরও বিভিন্ন দপ্তরের ৯ কর্মকর্তাকে সদস্য হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি সাধারণ বিষয় পড়তে হবে। এসএসসি পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ওপর। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতিবছর একটি করে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। গত বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে এ নিয়ম। এর আলোকে ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা হবে।