শততম ওয়ানডে আর শততম টেস্ট, দুটিতেই জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি আর বাদ থাকবে কেন! সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে গড়া হলো বড় জয়ের পথ। শততম টি-টোয়েন্টিও জিতে পূরণ হলো বাংলাদেশের অন্যরকম এক হ্যাটট্রিক।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবের ব্যাটিং স্বর্গে বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়ে ১০ ওভারেই তুলে ফেলে ২ উইকেটে ৯১ রান। দৃষ্টি তখন তাদের ২০০ রানে। পরে দারুণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ১৫১ রানেই।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয় উদ্বোধনী জুটিতেই। লিটন দাস ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ না ছাড়লে হয়তো ইনিংস ওপেন করা হতো না সৌম্যর। সুযোগটা পেয়ে তিনি নাঈমের সঙ্গে গড়েন রেকর্ড ১০২ রানের জুটি।
৪৫ বলে ৫০ করে সৌম্য আউট হলেও নাঈম জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ৫১ বলে ৬৩ রান করে।
টি-টোয়েন্টিতে শুরুর জুটিতে বাংলাদেশ প্রথমবার একশ রান পেল নিজেদের একশতম ম্যাচে।
নাঈম ও সৌম্যর রান তাড়ার শুরুটা ছিল যদিও ধীরগতিতে। প্রথম ৩ ওভারে আসে কেবল ৯ রান। পরে রিচার্ড এনগারাভার এক ওভারে নাঈমের তিন চার, লুক জঙ্গুয়ের বলে সৌম্যর ছক্কায় দলের ইনিংস পেয়ে যায় গতি। বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রতি ওভারেই।
জুটির একশ আসে ৭৮ বলে। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই তামিম ইকবাল ও লিটনের ৯২ ছিল উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ।
সৌম্য ফিফটিতে পা রাখেন ৪৫ বলে। তবে উদযাপন করতেই পারেননি। পঞ্চাশ ছুঁয়ে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে হয়ে যান রান আউট।
চমক দিয়ে তিনে নামেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার ৯০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বার। প্রথম বলেই ডাউন দা উইকেটে চার মেরে বুঝিয়ে দেন নিজের চাওয়া। তবে তিনিও কাটা পড়েন রান আউটে (১৫)।
দুই রান আউটে একটু কঠিন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের কাজ। নাঈমও তখন পাচ্ছিলেন না বাউন্ডারি। তাকে ৪৯ রানে রান আউট করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে জিম্বাবুয়ে। শেষ ৩ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ২৭ রানের।
তবে নুরুল হাসান সোহানের সৌজন্যে ভুগতে হয়নি বাংলাদেশকে। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে দারুণ ফিনিশিংয়ের পর এ দিনও ৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন এই কিপার-ব্যাটার। নাঈমও একটু বাড়ান গতি। ম্যাচ শেষ হয় ৮ বল বাকি থাকতেই।
অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং দাপটে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশই। ওপেনার টানিডওয়ানাশে মারুমানি যদিও ফেরেন দ্বিতীয় ওভারেই। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে দারুণ একটি ছক্কার পর আবার একই চেষ্টা করতে গিয়ে আউট হন তিনি। মিড উইকেট সীমানা থেকে অনেকটা ভেতরে দৌড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সৌম্য।
তবে সেই ধাক্কা বুঝতেই দেননি ফর্মে থাকা রেজিস চাকাভা। উইকেটে গিয়েই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন তিনি দলকে। দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ জুটি গড়েন ওয়েসলি মাধেভেরেকে নিয়ে। পাওয়ার প্লেতে জিম্বাবুয়ে তোলে ৫০ রান।
পাওয়ার প্লে শেষে মেহেদি হাসানের এক ওভারেই চাকাভা মারেন দুই ছক্কা, একটি চার।
৩৮ বলে ৬৪ রানের এই জুটি ভাঙেন সাকিব। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন মাধেভেরে (২৩ বলে ২৩)।
চাকাভা তখনও ছিলেন। ১০ ওভারে তাই জিম্বাবুয়ে তুলে ফেলে ২ উইকেটে ৯১।
এরপরই খেলার মোড় বদলে দেন নুরুল হাসান সোহান। শরিফুল ইসলামের বলে র্যাম্প শট খেলেন চাকাভা, টাইমিং ঠিকমতো করতে না পারলেও চেষ্টা করেন দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার। কিপিং থেকে সোহান দ্রুত ছুটে এসে গ্লাভস খুলে নিখুঁত সরাসরি থ্রোয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট করে দেন চাকাভাকে। ২২ বলে ৪৩ করে শেষ হয় তার ইনিংস।
ওই ওভারেই আবার দৃশপটে সোহান। এবার শরিফুলের বলে মুঠোবন্দী করেন তিনি সিকান্দার রাজার ক্যাচ। ব্রেন্ড টেইলরের বিশ্রামে এই সিরিজের অধিনায়ক রাজা করতে পারেননি কোনো রান।
এরপর রান যা একটু করেছেন, কেবল অভিষিক্ত ডিওন মায়ার্স। তিনিও শেষ করতে পারেননি কাজ। শরিফুলের ফুল লেংথ বলে স্লগ করতে গিয়ে উপড়ে যায় তার স্টাম্প (২২ বলে ৩৫)।
শেষ দিকে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন এক ওভারে নেন দুটি উইকেট। যার মধ্যে দ্বিতীয়টি শামীম হোসেনের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে। লং অন থেকে ওয়াইড লং অনে অনেকটা দৌড়ে সামনে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা এই তরুণ।
পরের ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানি দুটি চার মারলেও মুস্তাফিজ দুই উইকেট নিয়ে গুটিয়ে দেন জিম্বাবুয়েকে। ১১ বলের মধ্যে হারায় তারা শেষ চার উইকেট।
এই উইকেটে দেড়শ রানের পুঁজিতে ম্যাচ জেতা কঠিন। নাঈম-সৌম্য সেটিই দেখিয়ে দেন জিম্বাবুয়েকে। নাঈম অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করলেও ফিফটির সঙ্গে একটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা সৌম্য।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ শুক্রবার, বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ১৯ ওভারে ১৫২ (মাধেভেরে ২৩, মারুমানি ৭, চাকাভা ৪৩, মায়ার্স ৩৫, রাজা ০, মুসাকান্দা ৬, বার্ল ৪, জঙ্গুয়ে ১৮, মাসাকাদজা ৪*, এনগারাভা ০, মুজরাবানি ৮; সাইফ ৪-০-২৩-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-৩, সাকিব ৪-০-২৮-১, শরিফুল ৩-০-১৭-২, মেহেদি ১-০-১৮-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১৪-০, সৌম্য ২-০-১৮-১)।
বাংলাদেশ: ১৮.৫ ওভারে ১৫৩/২ (নাঈম ৬৩*, সৌম্য ৫০, মাহমুদউল্লাহ ১৫, সোহান ১৬*; মুজারাবানি, মাধেভেরে ৩-০-২৪-০, এনগারাভা ৪-০-৪৬-০, জঙ্গুয়ে ৩-০-২৮-০, রাজা ২-০-১৬-০, মাসাকাদজা ৩-০-২০-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার।