আন্তর্জাতিক

নেপালের দশা হলো মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের

আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি রেডিও আরএফআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে এক চুক্তির পর রাজোয়েলিনাকে ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রয়টার্স জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটিতে দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে হাজারো তরুণের বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ‘ক্যাপসাট’ প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ায়। ফলে রাজোয়েলিনা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর। রাজধানী আন্তানানারিভোতে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে জেন-জিদের বিক্ষোভ শুরু হলেও অল্প সময়েই তা রূপ নেয় বৃহত্তর অসন্তোষে। দুর্নীতি, খারাপ প্রশাসন ও মৌলিক সেবার অভাবের বিরুদ্ধে এটি একটি গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।

বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্দ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো জানিয়েছেন, সংসদের বিরোধী সদস্যরা রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন।

রোববার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করেছিলেন, ক্ষমতা দখলের একটি ষড়যন্ত্র চলছে। কারণ সেনাবাহিনীর যে ‘ক্যাপসাট’ ইউনিট ২০০৯ সালে তাকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করেছিল, সেই ইউনিট এবার তার বিরোধিতায় নেমেছে।

ক্যাপসাট ইউনিট দাবি করেছে, তারা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছে এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে প্যারামিলিটারির একটি অংশও বিক্ষোভকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে জনরোষের মুখে সিনেট সভাপতিকে বরখাস্ত করে জ্যাঁ আঁদ্রে ন্দ্রেমাঞ্জারিকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুপস্থিত থাকলে সিনেট সভাপতি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজধানীর কেন্দ্রে সোমবার হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে ‘প্রেসিডেন্টকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে’ স্লোগান দেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২২ বছর বয়সি এক হোটেলকর্মী জানান, মাসে ৩ লাখ আরিয়ারি (৬৭ ডলার) আয় করে তার শুধু খাবার জোটানোই কঠিন। তিনি বলেন, ‘১৬ বছরে সরকার শুধু নিজেদের ধনী করেছে, আর তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এই ধরনের ক্ষোভ মাদাগাস্কার ছাড়াও নেপাল, কেনিয়া ও মরক্কোর তরুণদের আন্দোলনেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার মাদাগাস্কারে গড় বয়স ২০ বছরেরও কম। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। স্বাধীনতার পর থেকে মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমেছে। ভ্যানিলা উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত মাদাগাস্কারের অর্থনীতি টিকে আছে নিকেল, কোবাল্ট, বস্ত্র ও চিংড়ি রপ্তানি করে।

উল্লেখ্য, জেন-জির এমন বিক্ষোভের মুখে সরকার পতন ঘটে শ্রীলঙ্কা ও নেপালেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *