মাত্র চার দিন আগে তরুণ অভিনেত্রী নিশাত আরা আলভিদা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘পরের জন্মে শালিক হব’। তখনো কি তিনি ভেবেছিলেন, চার দিনের মধ্যেই সত্যি সত্যি তিনি মারা যাবেন।
হ্যাঁ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) লেখা স্ট্যাটাসকে সত্য প্রমাণ করে গত বৃহস্পতিবার রাতে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ অভিনেত্রী (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এই তথ্য জানিয়েছেন তার কাছের বন্ধু মোহম্মদ হৃদয়।
জানা গেছে, চার দিন আগে হঠাৎই জ্বরে আক্রান্ত হন নিশাত। প্রথমদিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পরে হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তার প্লাটিলেট কমতে থাকে। এক দিনের মাথায় প্লাটিলেট আবার বাড়তে থাকে। কিছুটা সুস্থ বোধ করায় বাসায় চলে যান।
মোহম্মদ হৃদয় বলেন, আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়েছে। বুধবার রাতেও কথা হয়েছে। সে জ্বরকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছিল না, বলছিল ঠিক হয়ে যাবে। মনে করেছিল, ওষুধ খেলেই সেরে যাবে।
হৃদয় আরও বলেন, গত বুধবার সে হাসপাতাল থেকে বাসায় আসে। তখন সে অনেকটাই সুস্থ। অনেক সময় ধরে তার সঙ্গে কথা হয়। তার কিছুটা মন খারাপ ছিল। কারণ, আমরা একসঙ্গে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। ও ঢাকায়, আমি নাটোরে। সর্বশেষ সে অ্যাকাউন্টিং পরীক্ষা দিয়েছে। জানতে চেয়েছিলাম, পরীক্ষা কেমন হয়েছে? সে শুধু বলেছিল খারাপ হয়েছিল। এরপর আর কোনো পরীক্ষা দিতে পারেনি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে শুনি, সে মারা গিয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় নিশাত বাসাতেই মারা যান। তার বেড়ে ওঠা নাটোর জেলায়। সেখান থেকে এসএসসি পাস করেন। নাটোরেই একটি কলেজে ভর্তি হয়ে পরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। থাকতেন মায়ের সঙ্গে।
ঢাকায় আসার পর নিশাত মনেপ্রাণে অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন। সেই পথেই হাঁটছিলেন। কয়েক মাস আগে থিয়েটারিয়ান নামের একটি নাট্যদলে কর্মশালা করেছিলেন। সে বুঝতে পেরেছিলেন, অভিনয় নিয়ে অনেক কিছু জানতে হয়। থিয়েটার শুরুর ইচ্ছা ছিল। আর কোনো জানার সুযোগ পেল না।
নিশাত কাজ করেছেন বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম ও নাটকে। দীর্ঘ দুই বছর চেষ্টার পর সম্প্রতি একটা নাটকের মূল চরিত্রে সুযোগ পান এই অভিনেত্রী। তার আগে তাকে দেখা গেছে বিভিন্ন পার্শ্বচরিত্রে।
এদিকে নিশাতের মৃত্যুতে তার বন্ধু–সহকর্মীরা শোক প্রকাশ করছেন। বৃহস্পতিবরাই তার মরদেহ নাটোরে নিয়ে যাওয়া হয়। নাটোর হাফ রাস্তা এলাকার স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।