টি-টোয়েন্টিতে শুরুতে ব্যাটিং সামর্থ্য দেখাতে পারে না বাংলাদেশ, নিতে পারে না কেবল দুইজন ফিল্ডার ৩০ গজের বাইরে থাকার সুবিধা-এই সংস্করণে দলটির অনেক ব্যর্থতার বড় কারণ এটিই। মাঝেমধ্যে উল্টো ধুঁকতেও দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের। ‘পাওয়ারহীন’ এমন অসংখ্য পাওয়ার প্লের পরও আশা হারাচ্ছেন না মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য তার দলের আছে বলেই বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
২০ ওভারের চ্যালেঞ্জ এলেই আলোচনায় উঠে আসে এই ঘরানায় বাংলাদেশের দৈন্যতা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগের দিনও তাই হলো। ব্যাটিংয়ের হতাশার চিত্রটিই সেখানে বড় বেশি স্পষ্ট। মাহমুদউল্লাহ সেখানে আশা দেখালেও তার কণ্ঠে সঠিক পথ খুঁজে না পাওয়ার হতাশাও ফুটে উঠল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এর আগে-পরে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন সিরিজ মিলিয়ে সবশেষ ২১ ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ভীষণ বিবর্ণ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ১ উইকেটে ৪৬ রানই এই সময়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এর বাইরে চল্লিশ ছাড়াতে পেরেছে কেবল দুই ম্যাচে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ১ উইকেটে ৪৫ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১ উইকেটে ৪১। ত্রিশের ঘরে যেতে পারেনি আটবার। সর্বনিম্ন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২ উইকেটে ২২।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার অনুশীলন শেষে মাহমুদউল্লাহ বললেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন তারা।
“আশা করি, এটা থেকে বের হতে পারব। আমাদের দলের যে কম্বিনেশন বা শক্তি, আমি বিশ্বাস করি, পাওয়ার প্লেতে আমাদের ৪০-৪৫ রান করার সামর্থ্য আছে। যদি সেটা করতে পারি, এরপর আমরা সম্ভবত ঠিক পথেই এগোতে পারব।”
“প্রতিদিন হয়তো আপনি আকাশচুম্বি শুরু পাবেন না। যদি পেয়ে যান তাহলে তো খুব ভালো। তবে যেটা বললাম, ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমাদের লড়াই করার মতো একটা রান যেমন, ১৫০ থেকে ১৬০ ধারাবাহিকভাবে করতে হবে। এতে ম্যাচে আমাদের একটা সম্ভাবনা থাকবে। প্রতিপক্ষ যেই হোক। আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে কথা-বার্তা বলছি। এটা করার পথ বের করার চেষ্টা করছি। আশা করি, আমরা এক উপায় পেয়ে যাব।”
শুরুতে রান না আসার একটা মূল কারণ, ব্যাটসম্যানদের খোলসে ঢুকে যাওয়া। সেখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে বললেন অধিনায়ক।
“আমি মনে করি, টি-টোয়েন্টিতে যদি একজন ব্যাটসম্যান ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং না করে, তাহলে নিজেই খোলসে বন্দি হয়ে যাবে। আর একবার খোলসে ঢুকে গেলে এর বাইরে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। তো যে-ই ব্যাটিং করুক, টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডার হোক, কোনো ব্যাপার নয়। আমার মনে হয়, ইনটেন্ট নিয়ে ব্যাটিং করা, যার যার শক্তির জায়গা অনুযায়ী ব্যাটিং করা গুরুত্বপূর্ণ।”
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের টানা ব্যর্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় দায় টপ অর্ডারের। তারা পারছেন না ভালো শুরু এনে দিতে। উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে। রান করছেন কেবল মোহাম্মদ নাঈম শেখ, তবে ভীষণ মন্থর গতিতে। অন্য প্রান্তে কেউ না পারছেন টিকতে, না পারছেন দ্রুত রান তুলতে।
তবে কেবল টপ অর্ডারের দায় দেখেন না মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মনে করেন, দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিতে এগিয়ে আসতে হবে পুরো ব্যাটিং ইউনিটকে।
“টপ অর্ডারকে শুধু দোষ দিলে হবে না। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমাদের ভালো করতে হবে। কোনোদিন হয়তো টপ অর্ডার ভালো করবে না, মিডল অর্ডার সেটা কাভার করবে। কোনোদিন হয়তো টপ অর্ডার ভালো শুরু এনে দেবে, সেটা কাজে লাগাতে হবে। আমার মনে হয়, এটা পুরোপুরি দলীয় খেলা। এখানে ধারাবাহিক হওয়া অনেক কঠিন। তারপরও দল হিসেবে যদি আমরা একে অন্যকে সহায়তা করতে পারি তাহলে আমাদের ভালো সুযোগ থাকবে।”