জমজমাট প্রচার শেষে ভোটের অপেক্ষায় এখন নারায়ণগঞ্জবাসী; ঢাকার লাগোয়া এ মহানগরে রোববারের এই ভোট বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিদায়বেলায় ‘ইমেজ’ বাঁচানোরও নির্বাচন।
এ মওসুমে শীত যতটা থাকে, এবার ততটা নেই। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির বিপদ আছে। তার মধ্যেই মেয়র পদের প্রধান দুই প্রার্থীর কথার লড়াই ভোটের হাঁড়িতে তাপ যোগাচ্ছে।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কিছু থাকলেও বড় কোনো গোলযোগের ঘটনা নারায়ণগঞ্জে এখনও ঘটেনি। রোববার ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোটের মধ্য দিয়েই সব কিছুর ‘সুন্দর’ সমাপ্তির আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
এবারই প্রথম নারায়ণগঞ্জ সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে। ৫ লাখ ১৭ হাজারের বেশি ভোটার রায় দেবেন মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর (নারী) বাছাইয়ে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার রয়েছেন মেয়র পদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তাদের ছাড়াও মেয়র পদে লড়াইয়ে আছেন আরও পাঁচ প্রার্থী।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রার্থীরা নেমে পড়েছিলেন প্রচারের মাঠে। তাদের সেই আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় শেষ হল শুক্রবার মধ্যরাতে।
জমজমাট প্রচারের শেষ দিনে নানা অভিযোগ করেছেন প্রধান দুই প্রার্থী। ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা বলে আবার নিজেদের জয়ের আশাও প্রকাশ করেছেন জোরেসোরে। ২৬টি ওয়ার্ডে ১৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার চালিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, ঢালাও অভিযোগ করে লাভ নেই। ভোটে কোনো শঙ্কার কারণ নেই। কোনো অনিয়মে শৈথিল্য দেখানো হবে না। উৎসবমুখর ভোটের আয়োজন রয়েছে। সুন্দর ভোট করতে ‘সব ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে।
আর পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে সহিংসতার রেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদায়ী ইসির শেষ সময়ে এ বড় নির্বাচন ভালো করতে পারলে নিজেদের জন্য সুখকর হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘিরে বন্দর নগরীর পুরো এলাকা পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
ভোট তথ্য >> নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এবারের ভোটে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩২ জন লড়ছেন। >> নারায়ণগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। >> তার সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান, উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, আব্দুল কাদির, আফরোজা খাতুন, মো. ইউসুফ-উর-রহমান, মোসা. মাহফুজা আক্তার, সুলতানা এলিন, মো. আ. আজিজ ও আল-আমিন। >> প্রতি কেন্দ্রে থাকছেন একজন করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা; ১৩৩৩ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২৬৬৬ জন পোলিং কর্মকর্তা। >> ১৯২ কেন্দ্রের ১৩৩৩টি কক্ষে রায় জানাবেন ভোটাররা। |
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দশ বছর ধরে মেয়রের পদে আছেন আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, তার আগে তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।
গত দুটি নির্বাচনে উত্তাপ ছিল আরও বেশি, তবে প্রতিবারই বেশ ভালোভাবে উৎরে গেছেন গেছেন আইভী, এবারও তার ওপরই ভরসা রেখেছে আওয়ামী লীগ।
ভোটের প্রচারের শেষ দিন সকালে ফতুল্লার দেওভোগে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন নৌকার প্রার্থী। তিনি বলেন, “এখানে কিন্তু আইভীকে পরাজিত করার জন্য অনেকগুলো পক্ষ এক হয়ে গেছে। … কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়, কীভাবে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ভোটকে ঝামেলা করানো যায়। কিন্তু সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।”
সহিংসতার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার অনুরোধ করেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী।
“আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংতা করে, তাহলে আমার মনে হয় সেটা ঠিক হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব, এই ব্যাপারে যেন সজাগ থাকে তারা।”
নারী ও তরুণ ভোটাররা ‘আওয়ামী লীগের পক্ষেই ভোট দেবে’ বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি প্রশাসনের কাছে বরাবরই বলে আসছি যে, ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর থাকে। আমার নারী ভোটাররা যেন আসতে পারে। আমার ইয়াং ভোটাররা যেন আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই ইনশাল্লাহ।”
সংবাদ সম্মেলনে আইভি বলেন, ভোটের প্রচারে নেমে তার গলা ভেঙেছে, শরীরটাও ভালো নেই। তবে তিনি বসে থাকেননি।
বিকালে নারায়ণগঞ্জ রেলগেইট এলাকার বঙ্গবন্ধু সড়কে জমকালো শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হয় নৌকার মেয়রপ্রার্থীর ভোটের প্রচার। আইভী সেখানে বলেন, বিজয় ‘সুনিশ্চিত’।
“দুষিত, কলঙ্কিত নারায়ণগঞ্জ সিটিতে মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করতে আমি এসেছি। টানা দশ বছর ধরে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আপনারা আমাকে চেনেন। ২০১১ সালে আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, ২০১৬ সালেও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন।
“আবারও অন্যায়, অবিচার, খুনি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা নিয়ে লড়তে এসেছি। আমাকে কেউ ফিরিয়ে দেবেন না। নৌকাকে ঠেকানোর কেউ নেই।”
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তৈমুর
শুক্রবার সকালে সাক্ষাতকার নিতে গেলে তৈমুর আলম খন্দকার বললেন, “গলা তো ভাইঙা গ্যাছে, কথা কইতে পারি না।”
এরপরও দিনভর প্রচার চালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র এই প্রার্থী, ভোটে দাঁড়ানোর কারণে যাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি।
প্রচার সভাগুলোতে ঘুরে-ফিরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার নারায়ণগঞ্জে অবস্থানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাতি প্রতীকের প্রার্থী তৈমুর। কেন্দ্র থেকে সিসি ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়া এবং পুলিশি হয়রানিরও অভিযোগ করেছেন তিনি।
সকালে তিনি বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় তার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সম্মেলনে তিনি দাওয়াত পাননি, এটাতো আমাদের জন্য অপমানকর।”
সারাদিন চা-কফির ওপরেই আছেন তৈমুর আলম খন্দকার।
বিএনপির সব পর্যায়ের নেতারা যখন নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের কড়া সমালোচনা করছে, তৈমুর কেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে?
উত্তরে এই বিএনপি নেতা বলেন, “এদেশের আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি হচ্ছে পদোন্নতি-পদায়ন যার হাতে সকল ক্ষমতা তার হাতে। প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তারা সেটাই করবেন। আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জ আন্দোলনের সূতিকাগার, তিনি নিশ্চয় জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হতে দেবেন। তার দল এখানে স্পষ্ট দ্বিধা বিভক্ত।”
নৌকার প্রার্থীর লোকজনও বলছেন যে তৈমুর এবার নির্বাচন করছেন ‘আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের প্রার্থী’ হিসেবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি প্রশ্ন করলে তৈমুর বলেন, “শামীম ওসমানের পাও দিয়া হাঁটার কোনো প্রয়োজন আমার নাই। আমি যখন নারায়ণগঞ্জের বড় নেতা, তখন শামীম ছাত্র। আমি এখনো হকার, ঠেলাগাড়ি চালক, হোটেল-রেস্তোঁরা শ্রমিক সংগঠনের নেতা।”
তাহলে ওই কথা এল কেন- এই প্রশ্নে তৈমুরের উত্তর: “আরে ভাই এটা একটা অপপ্রচার। এই শামীম ওসমানের অফিসে বোমা হামলা চালিয়ে যখন ২২ জনকে হত্যা করা হল, তখন তিনি আমাকে প্রধান আসামি করলেন। এখানে আমার চেম্বার জ্বালানো হয়েছে, বাড়ি-ঘর জ্বালানো হয়েছে। কতো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে এখানে আছি। গত ৫০ বছরে আমি কখনো গণবিরোধী ভূমিকায় ছিলাম না। কখনো জনগণের পক্ষে আন্দোলন থেকে পিছপা হয়েছি এরকম রেকর্ড নাই।”
দল থেকে পদচ্যুত হওয়ার বিষয়ে তৈমুরের ভাষ্য, এটা করে বিএনপি তার ‘উপকার’ করেছেন।
“আমার সঙ্গে আলাপ করেই তো তারা এটা করছে। নৌকার যারা সমর্থক তারা তো ধানের শীষে ভোট দেবে না। এখন তাদের হাতি মার্কায় ভোট দেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন তো চারদিক থেকে আমার ভোট আসবে।”
বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা তাহলে ভোটের মাঠে নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তৈমুর আলম খন্দকারের চেয়ে প্রভাবশালী বিএনপির আর কে আছে নারায়ণগঞ্জে বলেন! জেলার কনভেনরকে ধইরা ফেলছে, সাবেক এক এমপি গিয়াসউদ্দীনকে দুদকের মামলা দিয়া এলাকাছাড়া করছে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরও তিনি আসতে পারেননি। কালাম সাহেব তার নিজের ছেলের জন্যই ভোট চাইতে পারেননি।”
তৈমুরের শেষ কথা, “আমি হারব না। হারার কোনো সুযোগই নেই।”
কেন মানুষ এবার হাতিতে ভোট দেবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বিগত ৫০ বছরে আমার কর্ম আর ১৮ বছরে আইভীর ব্যর্থতা। ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, পানির দাম সবই বাড়িয়েছেন। কিন্তু সার্ভিস দিতে পারেননি।”
ভোটের প্রচারের অংশ হিসেবে সকালে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন তৈমুর। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, ভোট ‘প্রভাবিত’ করতে বাইরের জেলা থেকে ‘সরকারি দলের লোকজনকে’ নারায়ণগঞ্জে আনা হচ্ছে।
প্রশাসনের উদ্দেশে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, “নির্বাচনের দিন যাতে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পারে, বিভিন্ন জেলা থেকে যে লোকজন আনা হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, তারা যেন নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যায়- এ ব্যাপারে আপনারা একটি নির্দেশনা জারি করুন।“
তৈমুর কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশি তল্লাশি ও হয়রানি করা হচ্ছে; মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ডিসি-এসপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে জনমনে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জের জনগণ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।”
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম এবং বিদেশি দূতাবাসগুলোকেও তিনি ভোটের দিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান।
প্রচারের শেষ সময়ে এসে রাত ১০টার দিকে আবার সংবাদ সম্মেলন করে ভোট নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা বলেন তৈমুর। ভোটের দিন যেন বহিরাগতরা নারায়ণগঞ্জে থাকতে না পারে, সে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা
প্রার্থী |
দল |
প্রতীক |
সেলিনা হায়াৎ আইভী |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
নৌকা |
তৈমুর আলম খন্দকার |
স্বতন্ত্র (বিএনপি) |
হাতি |
এবিএম সিরাজুল মামুন |
খেলাফত মজলিস |
দেওয়াল ঘড়ি |
মো. মাছুম বিল্লাহ |
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ |
হাতপাখা |
মো. কামরুল ইসলাম |
স্বতন্ত্র |
ঘোড়া |
মো. জসীম উদ্দিন |
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন |
বটগাছ |
মো. রাশেদ ফেরদৌস |
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি |
হাতঘড়ি |
প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে: সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, “আমরা ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছি। মক ভোটিং শেষ হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় তিনটি ভেন্যু থেকে নির্বাচনী সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।”
কারো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেনি বলে জানান তিনি।
“আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য মাঠে রয়েছেন; নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত রয়েছে। প্রচারণাও শেষ হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। এখন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের অপেক্ষা। আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তিনি জানান, এ নির্বাচনে ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবেন কারিগরি কর্মী। নির্বাচনী এলাকায় নয়টি কারিগরি টিম থাকছে।
নজর নারায়ণগঞ্জে, ‘ইমেজ রক্ষায়’ ভালোর প্রত্যাশা
এবার নারায়ণঞ্জের ভোট পর্যবেক্ষণে থাকছে নয়টি সংস্থা। এর একটি জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, “নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনটি এবার খুবই গরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ইসির বিদায়ের সময়ের সবচেয়ে বড় নির্বাচন এটি। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার- এ কমিশনও বিদায় বেলায় ভালো নির্বাচন করলে তাদের জন্যও বিদায়টা সুখকর হবে।”
কলিমুল্লাহ বলেন, ঢাকার লাগোয়া এ সিটির নির্বাচন ঘিরে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সবার নজর রয়েছে। ইউপি নির্বাচনের সহিংসতা যেমন ‘ভালো কোনো বার্তা দেয়নি’, এর মধ্যে সিটি নির্বাচনে যদি কোনো সহিংসতা হয় তাতে ‘ইমেজ নষ্ট’ হবে বিদায়ী ইসির।
“এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ বেশ ভালো। কোনো ধরনের অনিয়ম, সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে টান টান নজরদারি রাখতে হবে। কোনো শৈথিল্য দেখানো যানে না। এটা ইমেজ রক্ষারও নির্বাচন বর্তমান ইসির। নতুন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে খারাপ নির্বাচন হলে আগামীতেও এর নেতিবাচকও ইমেজ তৈরি করবে।”
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুক্রবার প্রচারের শেষ দিনে ভিন্ন বেশে প্রচার চালান প্রার্থীদের কর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
‘সুন্দর’ নির্বাচনের প্রত্যাশা
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও ভালোভাবে’ করার ‘সব ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে। দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ‘অভিযোগ নেই’ নির্বাচন নিয়ে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অন্তত ২২ জন করে নিরাপত্তা সদস্য রয়েছে।
“ভোটের প্রচারে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বা শঙ্কা নিয়ে যেসব কথা বলছে, তা ঢালাও কথা। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ খুব সুন্দর, ভালো নির্বাচন হবে এখানে।”
রোববার নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি টাঙ্গাইল-৭ আসনে উপ-নির্বাচন এবং পাঁচ পৌরসভায় ভোট রয়েছে।
ইসির অতিক্তি সচিব বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো রাখতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের স্বার্থে টাঙ্গাইল ও নোয়াখালীতে দুই ওসিকে বদলি করা হয়েছে।
“আমরা কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছি না। কোনো শৈথিল্যও প্রদর্শন করা হচ্ছে না। আশা করি, সুন্দর ভোট হবে। ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটার উপস্থিতিও তুলনামুলক ভালো হতে পারে।”
সব নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ: ইসি রফিক
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে। এ মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ইতোমধ্যে পাঁচ ধাপের ইউপি নির্বাচন শেষ করেছে ইসি। এ ভোটে সহিংতায় বেশ সমালোচনার মুখেও রয়েছে সংস্থাটি। রোববারের ভোটের পর তাদের অধীনে ৩১ জানুয়ারি ও ৭ ফেব্রুয়ারি ভোট রয়েছে ইউপির।
এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণঞ্জের ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কাছে প্রতিটি নির্বাচনই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করার জন্য সব আয়োজন করা হয়। এর পরেও দুয়েক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, প্রার্থী ও ভোটারের মানসিকতা না বদলালে এ গোলযোগ বন্ধ করা অসম্ভব। নারায়ণগঞ্জেও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না আশা করি।”
তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম যেন না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
“আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাইনি। ভালো নির্বাচন করার চেষ্টা আমাদের। ওই প্রার্থী জিতলে ভালো নির্বাচন হয়েছে, ওই দল হারলে ভালো নির্বাচন হয়- এমন মানসিকতাও পাল্টাতে হবে। ভোটকেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী বা ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় কাজ করা পরিহার করতে হবে।”
নিজেদের বিদায়ের শেষ সময়ে শুধু নয়, নিজেদের মেয়াদে সবসময় ‘ভালো নির্বাচন’ করেছেন বলে দাবি করেন এ নির্বাচন কমিশনার।