ঈদ সামনে রেখে ১৭ লাখেরও বেশি পরিবারে এখন উপচানো আনন্দ। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনার ৪৩২ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বৃহস্পতিবার ১৭ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন শ্রমিক জনপ্রতি দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়ে গেছেন। বেশির ভাগ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এবং কিছু টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেওয়ার পরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। সে অনুযায়ী কিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। যোগ্য সবাইকে টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থের সংস্থান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পাঁচটি প্যাকেজে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। পাঁচ প্যাকেজের প্রথমটি ছিল দুই হাজার ৫০০ টাকা করে নিম্ন আয়ের মানুষকে নগদ সহায়তা। মোট ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, নৌপরিবহন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সার্বিক যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবারই ১৭ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে সহায়তার টাকা পৌঁছে দিয়েছে। অর্থাৎ বাদ পড়েছে চার হাজার ২৫৬ জন। যাঁরা টাকা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে দিনমজুর ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন, পরিবহন শ্রমিক দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৩২ জন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫০ হাজার ৪৪৫ জন ও নৌপরিবহন শ্রমিক এক হাজার ৯৪৮ জন।
এঁদের বেশির ভাগ টাকা পেয়েছেন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে। বাকিদের টাকা গেছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। নগদ, বিকাশ ও রকেট তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৬ জনকে টাকা পাঠানো হয়েছে। আর ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৫৮৮ জন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যাঁদের টাকা পাঠানো হয়েছে, তাঁদের টাকা তোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা যেন না হয় সে জন্য খরচসহ পাঠানো হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯০ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন দিনমজুর দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন। এখানে সংখ্যায় কোনো হেরফের হয়নি। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩৬১ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার ২৯৫ টাকা। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৫৩ জনকে দুই হাজার ৫১৫ টাকা করে ৩৪৯ কোটি ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ২৯৫ টাকা পাঠানো হয়েছে। আর ৪৭ হাজার ৫৩৬ জন দিনমজুরকে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।
দুই লাখ ৩৫ হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিককে টাকা পাঠানোর কথা থাকলেও বাদ গেছে চার হাজার ৬০১ জন। টাকা পেয়েছেন দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৩২ জন পরিবহন শ্রমিক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই লাখ ২৩ হাজার ৪৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫১০ টাকা পেয়েছেন। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছয় হাজার ৯৯৮ জন ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিবহন শ্রমিককে নগদ সহায়তা বাবদ সরকারের ব্যয় ৫৭ কোটি ৯৪ লাখ ৩১ হাজার ৫১০ টাকা।
৫০ হাজার ৪৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে ৪৯ হাজার ৩৯১ জনকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১২ কোটি ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৫ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর এক হাজার ৫৪ জনকে দুই কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। সরকারের ব্যয় ১২ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৫ টাকা।
এদিকে নৌপরিবহন শ্রমিকের সংখ্যা শেষ দিকে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় এক হাজার ৬০৩ জনের কথা বলা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এক হাজার ৯৪৮ জনকে টাকা পাঠিয়েছে। এঁদের সবাইকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে চার কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার ২২০ টাকা পাঠানো হয়েছে।
দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, নৌপরিবহন শ্রমিক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পাঠানোয় সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪৩২ কোটি ৫৫ লাখ চার হাজার ৩৯০ টাকা। এ টাকা চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত অর্থবছর কর্মহীন, অতিদরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিতে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ দুই হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৮৭৫ কোটি টাকা।