অর্থনীতি বিনোদন

প্রযোজকরা সিনেমা ‘দিচ্ছে না’, সরকারের হস্তক্ষেপ চান হল মালিকরা

সাত মাস পর সিনেমা হল খুললেও নতুন সিনেমা সেভাবে মুক্তি না পাওয়ায় হলগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে জানিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছে হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি।

এ বিষয়ে প্রযোজকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাতে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রদর্শক সমিতি বলছে, প্রযোজকদের হাতে ২০টির বেশি চলচ্চিত্র থাকলেও তা ‘মুক্তি না দেওয়ায়’ দর্শক সঙ্কটে সিনেমা হলগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস  বলেছেন, বিষয়টি নজরে আনতেই তারা দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি বলছে, সিনেমা হল খোলার পর ‘সাহসী হিরো আলম’ ও ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ নামে দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়েছেন তারা।

সংগঠনের সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু  বলেন, “সিনেমা মুক্তি দেওয়ার পর প্রডিউসারদের টাকা তো তুলতে হবে। যে অনুপাতে খরচ হচ্ছে সেই অনুপাতে অর্থ তুলতে না পারলে সিনেমা কীভাবে মুক্তি দেওয়া যাবে।”

মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ২০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে সানি সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের ‘মিশন এক্সট্রিম’, শাপলা মিডিয়ার প্রযোজনায় শামীম আহমেদের ‘বিক্ষোভ’, এম এ রাহিমের ‘শান’, দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’, নাদের চৌধুরীর ‘জ্বিন’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্বসুন্দরী’সহ বেশ কয়েকটি তারকাবহুল ও বড় আয়োজনের চলচ্চিত্র রয়েছে।এর মধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সঙ্কটের মধ্যে তা মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন হল খোলার পর প্রযোজকরা লোকসানের শঙ্কায় ছবিগুলো আপাতত মুক্তি দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

মুক্তির তালিকায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার পাঁচটির মতো চলচ্চিত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সেলিম খান বলেন, “আপাতত ছবিগুলো মুক্তি দেব না। আসছে ঈদে মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।”

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমানছবি: মোস্তাফিজুর রহমানকরোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সাত মাস বন্ধ থাকার পর ১৬ অক্টোবর থেকে ৮০টির মতো সিনেমা হল খুলেছে; এর মধ্যে বেশিরভাগ হলে প্রথম সপ্তাহে ‘সাহসী হিরো আলম’ চললেও দর্শক সঙ্কটে ছবিটি এখন আর প্রদর্শিত হচ্ছে না।
এর বাইরে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ রাজধানী ও এর আশেপাশে গুটিকয়েক সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

নতুন সিনেমা না পাওয়ায় অনেকে পুরনো ছবি চালালেও দর্শক টানতে পারছে না; বেশিরভাগ হল বিদ্যুৎ বিলই তুলতে পারছে না আক্ষেপ করেছেন হল মালিকরা।‘ভালো’ ছবি মুক্তি না পাওয়ায় রাজধানীর বলাকা, শ্যামলী, মধুমিতাসহ দেশের ৪০টির বেশি সিনেমা হল এখনও খোলেনি।

মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ  বলেন, “ভালো সিনেমা মুক্তি না পেলে সিনেমা হল খুলব না। লোকসান দিয়ে ছবি চালানো সম্ভব নয়।”

শিগগিরিই নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি না দিলে যে হলগুলো খুলেছে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে মন্তব্য করে হল মালিকদের নেতা সুদীপ্ত বলেন, “চার মাস আগে প্রডিউসাররা বলেছিল, হল খুললে তারা সিনেমা দেবে। এখন পরিস্থিতি তো আগের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। তারপরও ছবি দিচ্ছেন না তারা।

“তারা হয়ত ভেবেছে, তাদের কাছে আমরা ধর্ণা দিই। তারা হয়তো শিক্ষা দিতে চাইছে আমাদের। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির কথা তারা ভাবছে না।”

দুই সংগঠন মিলে বিষয়টির সুরাহা টানা যাচ্ছে না কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, ‘যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় বিষয়টি নিয়ে বসতে রাজি আছি।

“করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে চলচ্চিত্র সঙ্কট নিরসনে হল মালিকদের নিয়ে সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বসতে চেয়েছি, তারা সাড়া দেয়নি। কিন্তু তারা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। অভিযোগ করে তো কোনও লাভ নেই।”

অন্যদিকে সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, এফডিসির সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা বিশৃঙ্খলার কারণে সমঝোতা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেই তা কার্যকর হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *