মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ফেসবুক লাইভে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান মুনিয়া ঘটনার দিন ফোন করে বলছিল, ‘আপু তোমরা কখন আসবা, আমার অনেক বিপদ।’
নুসরাত জাহান জানান, মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) মুনিয়ার কুমিল্লায় চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগের দিনেই বিপদের কথা ফোনে জানতে পারি।
এসময় কান্নাজরিত কণ্ঠে নুসরাত জাহান বলেন, আমরা যখন গুলশানের ফ্ল্যাটে ছুটে যাই, দেখি ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। ঐসময় ফোনও বন্ধ ছিল মুনিয়ার। পরে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করি আমরা। দরজা ভাঙ্গতে গিয়ে এতো জোরে শব্দ হচ্ছে অথচ ভিতর থেকে কোনো শব্দ হচ্ছিল না। নুসরাত জাহানের ভাষায়, এসময় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। দরজা ভেঙ্গেই দেখি ঝুলন্ত অবস্থায় মুনিয়া। পা দুটি বিছানায়, হালকা বাঁকানো ছিল। বিছানা একদম পরিপাটি ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ সেট করে রেখে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
মুনিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল কখন এর উত্তরে নুসরাত জাহান জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মুনিয়ার সাথে সর্বশেষ কথা হয়।
নুসরাত জাহান আরো জানান, তার বোনকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল অভিযুক্ত শিল্পপতি। কিন্তু বিষয়টা গোপণ রাখতে হবে এ শর্ত দেওয়া হয়েছিল মুনিয়াকে। এমনকি বিয়ের পরও বিষয়টি গোপণ রাখার কথা ছিল।
গুলশানের ফ্ল্যাটের বিষয়ে নুসরাত জাহান বলেন, ফ্ল্যাটের বিষয়টি আমরা জানতাম। আমরা মুনিয়াকে নিষেধও করেছি। কিন্তু মুনিয়া সরল মনে সব বিশ্বাস করেছে। ঐ শিল্পপতি প্রতি সে বিশ্বাসই কাল হলো এখন। এছাড়া ডায়েরির বিষয়ে বড় বোন বলেন, ডায়েরিতে অনেক ছবি আঁকা, আঁকার সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক নিয়েও অনেক কথা ছিল। সকল ডকুমেন্ট পুলিশের হেফাজতে আছে। এসময় নুসরাত জাহান জোর গলায় বলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ড। এর সুষ্ঠু তদন্ত চান তিনি।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ। এ ঘটনার পর সোমবার রাত দেড়টার দিকে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান।
গত মাসের ১ তারিখে রাজধানীর গুলশানের ১২০ নম্বর রোডের একটি বাড়ি ভাড়া নেন মোসারাত জাহান মুনিয়া। বাসাটির ভাড়া ছিল ১ লাখ টাকা। বাসায় একাই থাকতেন মুনিয়া। সোমবার সন্ধ্যায় বাসার তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ কুমিল্লায় নেওয়া হয়। পরে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
কুমিল্লার মনোহরপুরের উজির দীঘির দক্ষিণপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সফিকুর রহমানের মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া রাজধানীর মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগে সে কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ নামক একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে সে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার মডার্ন হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুর মনিপুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। পরিবারে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার কনিষ্ঠ।