ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য ‘মানুষকে হত্যা’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কভিড মহামারি ও টিকা নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ‘ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মের’ ভূমিকা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিবিসি জানায়, ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলোকে সম্প্রতি ব্যাপক চাপের মধ্যে রেখেছে হোয়াইট হাউস। ফেসবুক বলেছে তারা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ‘আগ্রাসী পদক্ষেপ’ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা মানুষ হত্যা করছে। যারা টিকা দেয়নি, শুধু তাদের মধ্যেই এখন মহামারি বিরাজমান।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, দেশটিতে সম্প্রতি কভিড-১৯-এ মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব দেখা গেছে শুধু টিকা দেয়নি এ রকম কমিউনিটিগুলোতে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি গত শুক্রবার বলেছেন, ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুজব মোকাবেলায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এটাও পরিষ্কার যে আরো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।’
ফেসবুকের মুখপাত্র কেভিন ম্যাকঅ্যালিস্টার মন্তব্য করেছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান প্রমাণ নেই, এমন অভিযোগের কারণে বিভ্রান্ত হবে না।
ফেসবুক আলাদা একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা কভিডসংক্রান্ত এক কোটি ৮০ লাখ ভুয়া তথ্য এবং ক্রমাগত নিয়ম ভেঙেছে এমন বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট অপসারণ করেছি।’
বিবিসি জানায়, ‘কন্টেন্ট’ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফেসবুক সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে। তবে মহামারি নিয়ে ভুয়া ‘কন্টেন্ট’ এখনো ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায় প্ল্যাটফর্মটিতে। গত মার্চ মাসে এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে ভ্যাকসিনবিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের প্রায় ছয় কোটি ফলোয়ার রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭.৯% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অন্তত ৫৯.২% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন। তবে টিকা নেওয়ার জন্য যোগ্য যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেকেই টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। টিকার ওপর তাঁদের ভরসা নেই বলে তাঁরা জানান। ফেসবুক, গুগল আর টুইটারের প্রধান নির্বাহীদের গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে ভুয়া তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। টুইটারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের বলেন, ‘পোস্ট মডারেট’ করার বিষয়ে টুইটার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই জানান, ইউটিউব বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট সরিয়ে নিতে কাজ করছে। পাশাপাশি ভ্যাকসিনবিষয়ক তথ্য প্রচার করায়ও ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জো বাইডেনের ছেলের বিব্রতকর ই-মেইল ফাঁসের সময় ‘সেন্সর’ করার অভিযোগ স্বীকার করার পরই এমন অভিযোগ উঠল।