বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একাংশ পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে টঙ্গী রেল স্টেশন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ যান চলার জন্য প্রস্তুত। আর ওই ফ্লাইওভারের টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত অংশ আগামী বছরের মে মাসে চালু করা হতে পারে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পথ। এটি উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব জেলার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গের কিছু যানবাহন এ সড়ক ব্যবহার করে। এ সড়কের যানজট কমিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরিকল্পনায় ছিল, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কের মাঝ দিয়ে জোড়া লাগানো বিশেষায়িত বাস চলাচল করবে। এসব বাসে ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী পরিবহণের চিন্তা থেকে এত আয়োজন করা হয়। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের উদ্বোধনের লক্ষ্য ছিল ২০১৬ সালে।
কিন্তু তখন উদ্বোধন তো দূরের কথা, পুরোপুরিভাবে কাজই শুরু করতে পারেনি ঢাকা বিআরটি কর্তৃপক্ষ। এরপর কেটে গেছে ৬ বছর। এ সময়ে প্রায় ৮২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আসন্ন ডিসেম্বরে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করে বিশেষায়িত বাস চালুর ঘোষণা দেয় বিআরটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন এসে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের চার কিলোমিটারের একটি ফ্লাইওভারের কাজই ঘোষিত সময়ে শেষ করতে পারছে না তারা। এখন অর্ধেক পরীক্ষামূলক চালু করতে চাইছে। এ প্রকল্পে এটি ছাড়াও ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে-সেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। অবশ্য, প্রত্যাশা পূরণ না করলেও ‘ঢাকা-গাজীপুরের দুঃখ খ্যাত’ ফ্লাইওভারের অংশবিশেষ চালু বিআরটি প্রকল্পের এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সপ্তাহে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গীর রেল স্টেশন পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ফ্লাইওভারের পরীক্ষামূলক চালু করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই এটি চালু করা হবে, ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে এটি চালু হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। সে বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইওভারের একাংশ চালু করব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এসএম সালাহ উদ্দিন বলেন, যেহেতু বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের অর্ধেক অংশের কাজ শেষ হয়েছে। সেটা চালু করা যেতে পারে। তাহলে কোনো অসুবিধা থাকলে সেটা সংশোধন করে নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ, ফেলে রেখে তো লাভ নেই। ফ্লাইওভারের ওপরে বাস থেকে নেমে র্যাম দিয়ে যাত্রীরা নিচে নেমে যেতে পারবে। তবে ফ্লাইওভার চালুর পাশাপাশি নিচের সড়কগুলোও ভালোভাবে সংস্কার করতে হবে। তাহলে কার্যকর সুফল মিলবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সংশোধিত সময় অনুযায়ী আসন্ন ডিসেম্বরে এ বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। যদিও প্রকল্পের কাজ এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বিআরটি প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি। সরকার বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় ২০১২ সালে। প্রথম ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে-বাংলাদেশ সরকার, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা-এএফডি, এশীয় উন্নয়ন সংস্থা-এডিবি। বিআরটি প্রকল্পে দুটি বিশেষায়িত রুটে ১০০টি আধুনিক বাস চলাচল করবে। ৭০টি রুটকে ৭টি রুটে এনে একটি কোম্পানির অধীনে এসব বাস পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। বাসের বিষয়টি নিয়ে এখন ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। কোন বাস কেনা হবে, কবে কেনা হবে নাকি বিআরটিসির বাসে চলবে সেসব নিয়ে রয়েছে মিশ্র আলোচনা। বিআরটির এ ধরনের কার্যক্রমে হতাশ নগরবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।