বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এতটুকুও খুশি না। আমরা যেটা দেখিছি, এ বছর একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন। এটা তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এখনো অব্যাহত রেখেছেন। হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টে যে তথ্য বেরিয়েছে, তাতে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তারা খুশি না। যে কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তাদের অব্যাহত রাখতে হয়। এমনকি সামরিক শাসকদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রাখতে হয়। আজ বাংলাদেশের যে অবস্থা, সে পরিপ্রেক্ষিতে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) দেশের প্রয়োজনীয়তা মনে করছে, সেটা করছেন। তারা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
এর আগে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। পরে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদলীয় রাষ্ট্রের এটাই বৈশিষ্ট্য, যারা রাষ্ট্রদূত থাকবেন, যারা সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন এবং যারা বিভিন্ন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন-তারা শুধু যে দল (ক্ষমতায়) আছে, তাদের পক্ষেই কথা বলবেন। তারা বাইরে যে কাজগুলো করেন, সেটা বাংলাদেশ প্রমোট করে না। তারা আওয়ামী লীগকে প্রমোট করে। আওয়ামী লীগকে প্রমোট করার কারণেই তারা বাইরে কিছু লোককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।’
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ। অন্যদিকে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বাংলাদেশ পিপলস পার্টির পক্ষে দলটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাবুল সরদার চাখারি, কো-চেয়ারম্যান পারভীন নাসের খান ভাসানী, এআর জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুনুর রশিদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর হোসেন খাদিজা আক্তার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গণফোরাম (একাংশ) ও গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক সূত্র জানায়, লিয়োজোঁ কমিটির বৈঠকে নেতারা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকরী কর্মসূচির প্রস্তাব জানান।
এছাড়া একদফার আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণগুলো শনাক্ত এবং এর সমাধানের পক্ষে জোর দেন। পাশাপাশি আগামী দিনের কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমমনা দলগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেন নেতারা। গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোল কর্মসূচিতে গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একদফার আন্দোলনকালীন সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা মাঠে থাকলেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতির বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি শিগ্গিরই সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার পক্ষে মত দেন উপস্থিত নেতারা।
আ.লীগের কারণে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত দেশ : এদিকে ফারাক্কা দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের কারণে বাংলাদেশের মানুষ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। ৪৮ বছর আগে অবিসংবাদিত মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ডাকে সারা দেশ থেকে লাখো জনতা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সংগ্রামে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চে অংশ নেয়।