বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়াতে ভারতের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত দেশটির রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠককালে এ আগ্রহের কথা জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি।
পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন ব্রিফ করেন।
স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ। এরপর বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন ভারত এবং বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও প্রকল্প সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রাম নাথ বলেন, দুদেশের বাণিজ্য যাতে আরও বাড়ে, সে ব্যাপারে তার দেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।
বাণিজ্য বাড়াতে যৌথ উদ্যোগের ওপর জোর দেন রাম নাথ কোবিন্দ।
দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের কথা তুলে ধরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে ব্যবসা-বণিজ্যের সুযোগও বেড়েছে।
দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ বলেন, মহামারির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার যে নজির দুই দেশ গড়েছে, এর মাধ্যমে দুই দেশ একযোগে কাজ করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে বাংলাদেশে আসতে পেরে গর্বিত বলে জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ।
তিনি বলেন, মৈত্রী দিবস উদযাপন দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় টেস্টিমনি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে বর্ণনা করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক।
বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভারতকে বাংলাদেশের খুব কাছের ও বিশ্বস্ত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের সার্বিক সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তা এখন ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যার সমাধান, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো, যোগাযোগ খাতে দুদেশের সম্পর্ক অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। দুদেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রসার ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাণী পাঠিয়ে এবং এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কূটনৈতিক সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়ের’ সূচনা করেছেন।
আবদুল হামিদ বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ‘মৈত্রী উৎসব’ পালন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশে ও ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণ একে অপরের ইতিহাস আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় বছর উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন চলছে।
দুদেশের মধ্যেকার এখনো অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বৈঠক শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২১ যুদ্ধ্ববিমানের রেপ্লিকা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে উপহার হিসেবে দেন।
পরে রাম নাথ কোবিন্দ বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন এবং তার সম্মানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য নৈশভোজে যোগ দেন।
নৈশভোজের আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।