বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন দুই দেশের রাষ্ট্রপতি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে একথা বলেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি চলমান ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতীয়দের সর্বাত্মক সহযোগিতা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকার আশ্বাস দেন।
পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বাসসকে বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে জানান।
স্থল-নদী-আকাশ পথে উন্নত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, এই কারণে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে।তিনি দুদেশের বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ খাতে আরও বিনিয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধের নায়ক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বাংলাদেশ মারাত্মক কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং ‘আমরাও এতে গর্বিত।’
রামনাথ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দুদেশকে একসঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে।তিনি ভারতের জাতীয় দিবসের মার্চ-পাস্ট ইভেন্টে বাংলাদেশ দল এবং পরবর্তীতে ঢাকায় বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতীয় কন্টিনজেন্ট সদস্যদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এটি অবশ্যই দুদেশের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি প্রমাণ বহন করছে যখন উভয় রাষ্ট্রই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং ভারতের ফার্স্ট লেডি সবিতা কোবিন্দ এবং তাদের মেয়ে স্বাথী কোবিন্দ সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তার আগমনে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান এবং রাশিদা হামিদও ভারতীয় ফার্স্ট লেডিকে আরেকটি ফুলের তোড়া উপহার দেন।পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠক করেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেস সচিব জানান, ‘সাক্ষাতের সময় দুই রাষ্ট্রপতি দুদেশের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দেন।’
আবদুল হামিদ ভারতের রাষ্ট্রপতির এই সফরকে বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় বলে উল্লেখ করেন।
আবদুল হামিদ উল্লেখ করেন, দুটি দেশ একযোগে ঐতিহাসিক মেগা ইভেন্ট উদযাপন করছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী একই সঙ্গে উদযাপন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, ভারত বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বন্ধু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার কথা স্মরণ করে দেশটির সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুরু হয়েছিল তা বর্তমানে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বার্তা পাঠিয়ে এবং ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে যোগ দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে।তিনি বলেন, গত এক দশকে নিরাপত্তা, সীমান্ত বন্দোবস্ত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতে দুই দেশের সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন সম্প্রসারণে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বিষয়টি আরও বেগবান হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এবং সফররত ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা. সুভাষ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।