বর্তমান বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা যেটি আছে, সে বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি সরকারের হাতে মূল নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানস্থ লেকশোর হোটেলে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট আয়োজিত কারেন্ট স্টেট অব জুডিসিয়ারি: এ টুল টু অপ্রেস অপোজিশান ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এজন্য যে, যখন ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়েছিল তখন তিনি বাসভবনে একটি প্রেস কনফারেন্স করেছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, এইতো ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করার মাধ্যমে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা এবং সহিংস রাজনীতির পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো। আজকে সেটি বড় সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে আজকে গণতন্ত্র নেই। এটির কারণ আছে, কারণটি হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রতো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। ১৯৭৫ সালে তারাই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো।
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ কথা বলতে পারে না। আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজ সাহেবেরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো? আজকে বিচার ব্যবস্থা যদি দলীয়করণ হয়ে যায় পুরোপুরিভাবে, মানুষ কোথায় যাবে?
তিনি বলেন, সেজন্যই সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা প্রয়োজন আজকে যে, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে। শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, আজকে যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্র কাঠামোটা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিসিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার বিএনপি দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুইদিন আগে ঢাকাবারের সামনে আমাদের আইনজীবীদের ওপর পুলিশ অতর্কিত হামলা করেছেন। সেখানে প্রায় ৩০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন। এ ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আজকে পত্রিকা দেখলাম ৬৭ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এটিই হচ্ছে আসল চিত্র। মারল তারা, আর মামলা করল যারা মার খেল তাদের বিরুদ্ধে। সমস্ত বাংলাদেশে এখন এটিই চলছে। মামলায় হাজার হাজার লোকের নাম দেয়, কয়েকজনের নাম উল্লেখ থাকে আর বাকি সব অজ্ঞাতনামা।
সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাসের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, সম্প্রতি পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়েছে। যা নিয়ে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয় সমগ্র বিশ্বের মানুষ কথা বলছেন। যেটি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যেটিকে আপনারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হিসেবে চিনেন। এ নতুন আইনের বিষয়ে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এবং সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক যে সংস্থাগুলো আছে যেমন ইউনাইটেড নেশন থেকে শুরু করে হিউম্যান রাইট কমিশন তারাও বলেছে, এ আইনের বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে। সেখানে সরকার কোনো কিছুই পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করে সংসদে এ বিল পাস করেছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য রাখেন।
এ সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এসএকে কামরুজ্জামান, জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, আবদুর রশিদ, বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বদরুজ্জামান বাদল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মীর হেলাল উদ্দিন, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।