পাহাড়িদের একটি অংশের বিরোধিতার মুখেই আজ শপথ নিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুপ্রদীপ চাকমাকে উপদেষ্টা করায় চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের সহধর্মিণী রানি য়েন য়েন রায়ের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীসহ পাহাড়িদের একটি অংশ বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছে।
তারা সুপ্রদীপকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যায়িত করে তাকে সরানোর দাবিতে শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেছেন।
এ সময় অবিলম্বে সুপ্রদীপকে সরিয়ে তাদের সঙ্গে বসে অন্য একজনকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানান তারা।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবিটি জোরালো করা হচ্ছে। এসব স্ট্যাটাসে সুপ্রদীপ চাকমাকে সরিয়ে রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, সাবেক রাঙামাটি জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান ও অধ্যাপক মংসানু মারমা-এ তিনজনের মধ্যে যে কোনো একজনকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে।
মানববন্ধনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, আদিবাসীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই তাদের প্রতিনিধি ঠিক করা আদিবাসীদের সঙ্গে এক ধরনের মশকরা। আমরা এতদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছি। কিন্তু নতুন সরকার এসেই আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক একটা আচরণ করেছে।
রাঙামাটির চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানি য়েন য়েন বলেন, ৯ আগস্ট আদিবাসী দিবস আমাদের কাছে মহৎ একটা দিন। কিন্তু এদিনেই আমাদের সঙ্গে নতুন সরকার মশকরা করছে। যেই ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি করা হয়েছে, তিনি সব সময় ‘জি স্যার’ করার লোক। তিনি কখনোই আমাদের হয়ে কিছুই করতে পারবেন না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে পারবেন না। তাই আমরা চাই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের প্রতিনিধি ঠিক করা হোক।
এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, তারা কী কারণে আমার বিরোধিতা করছেন তা আমার জানা নেই। সেটা তাদের বিষয়। আমি তো উপদেষ্টা হতে চাইনি। আমাকে যে উপদেষ্টা করা হয়েছে, তাও জানা ছিল না। পরে তা আমাকে জানানো হলে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাতে সম্মতি প্রকাশ করেছি।
তিনি জানান, আজ তিনিসহ তিন উপদেষ্টাকে শপথ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৫ সালে সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি।
চাকরি জীবনে সচিব পর্যায়সহ দেশে-বিদেশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা ও কলম্বোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদ থেকে ২০২১ সালে অবসর নেন তিনি।