নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে সরকার সেল গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার গুলশানস্থ দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা শুনেছি একটা তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে এই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই সেলের মাধ্যমে অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কি আছে? একটা হচ্ছে আমি ময়লার গাড়ি পোঁড়াচ্ছি। সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে মোটর সাইকেলের পেছনে গিয়ে বোমা মেরেছি এমন অভিযোগে মামলা। এই ছল-চাতুরি প্রতারণা করে গোটা জাতিকে একটা ভয়াবহ অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। যে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মীর নামে মামলা দেয়া হচ্ছে এরা তো কেউ চোর না, এরা কেউ ডাকাত না, এরা কেউ ক্রাইম করে না।
এরা সবাই রাজনৈতিক কর্মী, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে তাদেরকে সমস্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে এভাবে একেবারে নির্মূল করে দেয়ার যে ভয়াবহ প্রচেষ্টা এটা ফ্যাসিবাদ ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
ফখরুল বলেন, যখনই বিরোধী দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে এসেছে তাদেরকে একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে দেখেছেন বাম জোট যে কর্মসূচিতে দিয়েছিলো সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেফতার করেছে, মারপিঠ করেছে। গত ৬ তারিখ ইশরাক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। সেই সময়ে তাকে বিনা উস্কানিতে গ্রেফতার করা হয়, সেখানে অনেককে মারধর করা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়। পরবর্তিতে তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় সেখানেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করা হয়, নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ মামলা দিয়েছে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে। এরা কারা? এই ৮৮ জন হচ্ছেন মহানগর দক্ষিনের নেতৃবৃন্দ এর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। থানার প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। উদ্দেশ্যটা কী? সেই আগের মতোই স্টাইল। একজন হজ্বে আছেন চকবাজার থানার সেক্রেটারি (আনোয়ার পারভেজ বাদল), একজন আইনজীবী আছেন। তার বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হয়েছে।
‘নতুন ইসি নাটক করেই যাচ্ছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে।
তাদেরকে ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি উনি সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক তো ছিলেন যে কথাই বলতেন তা ভিন্নভাবে বলতেন। এখনকার জন চমৎকার কথা বলেন এবং তা বলে মানুষকে বিমোহিত করার চেষ্টাও তিনি করেন। এই জিনিসগুলো সবচাইতে ভয়াবহ। এই নাটকগুলো করা হচ্ছে। এই নাটকগুলো করে তারা আবার আরেক নির্বাচন করার পায়তারা করছে। যে নির্বাচন তারা আগের মতোই জোর করে এবং বিভিন্ন কৌশলে করতে চায়। এবার হয়ত আগের মতো নির্বাচন হবে না।
‘গণমাধ্যম কর্মী আইন প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাও কম ভুক্তভোগী নন। ইতিমধ্যে আপনাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, মারা গেছেন। অনেককে জেলে যেতে হয়েছে সত্য কথা লেখার জন্যে। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। এখন গণমাধ্যম কর্মী আইন করতে যাচ্ছে। আমাদের তথ্য মন্ত্রী সাহেব উনি বলছেন এটা নাকি রিভিউ করা হবে। রিভিউ করে কী করবেন সেটা তো আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে দেখেছি। এই দেশ এখন সম্পূর্ণভাবে একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী, এককথায় বলতে গেলে একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের হাতে পড়েছে। এই সরকারকে সরাতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।
গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পক্ষে গণমাধ্যমের ‘আরো বেশি সহযোগিতা’ চান বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
‘খালেদা জিয়ার মামলা’
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে মামলা এটা কোনো মামলা না, এটা মধ্যে কিছুই নেই। সমস্ত মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এই নেত্রী যিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেন, সংগ্রাম করলেন তাকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে, গণতন্ত্রের হত্যার জন্য তাদেরকে দায়ী থাকতে হবে। একদিন না একদিন তাদেরকে জনগনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন, রিমান্ডে নেয়া নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন ফখরুল।
পুলিশের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যেমন আচরণ করে তা দূঃখজনক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দেশ কোথায় চলে যাচ্ছে? যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি তারা যে ভাষায় কথা বলেন, এই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা। তাদেরকে দেখে মনে হয় না আমরা কোনো সভ্য সমাজে বাস করছি।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, এসকে সেকান্দার, হারুনুর রশীদ, মুনির হোসেন চেয়ারম্যান, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।