অর্থনীতি

ভারত থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন কিনবে সরকার

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আগামী জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন। এ লক্ষ্যে জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে করোনা মোকাবিলায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে প্রথম ধাপে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এতে সরকারের খরচ হবে এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ফলে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনে খরচ হবে ছয় দশমিক ২৫ ডলার (প্রায় ৫৬০ টাকা)।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেক্সিমকো ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এ ভ্যাকসিন দেশে আসা শুরু হতে পারে। প্রথমে তিন কোটি ডোজ আনা হবে। ভ্যাকসিন রাখা হবে বেক্সিমকোর গুদামে। ভারত যে দামে ভ্যাকসিন পাবে সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকেও একই দামে তা দেবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে এটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছে। বর্তমানে এটি তৃতীয় ধাপে প্রয়োগ শুরু হয়েছে, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ভ্যাকসিন প্রত্যেক মানুষের জন্য দু’টি করে ডোজ দেওয়া হবে। দেড় কোটি মানুষকে ২৮ দিন পর পর এ ডোজ দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশে আমদানি করতে চুক্তিতে শর্ত রয়েছে।

জানা গেছে, সিরামের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে সিরাম ইনস্টিটিটিউট অব ইন্ডিয়া এর প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিনের পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের মূল্য পাঁচ ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়। ভ্যাকসিনের অন্যান্য আনুষাঙ্গিক উপকরণের জন্য এক দশমিক ২৫ ইউএস ডলার ধার্য করা হয়। এতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বাবদ মোট খরচ দাঁড়ায় ছয় ডলার ২৫ সেন্ট। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

এদিকে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৮ (১) অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন (অক্সফোর্ড এস্ট্রোজিঙ্কা ভ্যাকসিন, সার্স-কভ-২ এজেডডি ১২২২) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজমান। মানুষ এ আতঙ্ক থেকে পরিত্রাণ পেতে ভ্যাকসিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা, গুণগতমান, কার্যকারিতা এবং সংরক্ষণের জন্য তাপমাত্রা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এস্ট্রোজিঙ্কা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিনের প্যাটেন্ট নিয়ে কাজ করা সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাকসিন সরবরাহের নিমিত্তে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট। এছাড়া করোনা প্রাপ্তির সব বিষয় বিবেচনায় ইতোমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগে ভ্যাকসিন ক্রয় ও আনুষাঙ্গিক ব্যয়সহ মোট এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ থেকে ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক বরাদ্দ হিসাবে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায় যা রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভূক্ত। অর্থের উৎস জিওবি। ভ্যাকসিন ক্রয়ে ক্রয় কার্যালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান মহাপরিচালক কৃর্তক ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *