জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বাংলাদেশকে আরও ঋণ সহায়তা দিতে চায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটি ১৮২ কোটি মার্কিন ডলার (২৬৪ বিলিয়ন ইয়েন) ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ঋণ প্রতিশ্রুতির দিক থেকে ভারতকে ছাড়িয়ে জাইকার বৃহত্তম অংশীদার হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।
সদ্যবিদায়ী জাইকার বাংলাদেশ আবাসিক প্রধান প্রতিনিধি ইয়ো হায়াকাওয়া এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের জনগণের অংশীদারত্ব এবং হৃদয়ের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হবে।’
জাপান ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। একই বছরে ১০৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য অনুদান সহায়তার মাধ্যমে শুরু হয় জাইকার আর্থিক সহায়তা। বর্তমান এ ঋণ সহায়তার অঙ্ক ২৮শ’ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। জাইকার অর্থায়নে ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ২ লাখ ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের ৭৪ শতাংশের বেশি ঋণ দিচ্ছে জাইকা।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, জাইকা এখন রাইজিং উন্নয়ন দাতা সংস্থা। এশীয় অঞ্চলে বলতে গেলে এ সংস্থাটি একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তার ব্যাপারে অনেক দাতা সংস্থার তুলনায় তারা ভালো বুঝতে পারে। ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পসহ বাজেট সহায়তা করেছে এ সংস্থা। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আগামীতেও তারা আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও প্রকল্পের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীকে এ চিঠি দিয়েছেন ইয়ো হায়াকাওয়া। সেখানে তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী ভাইরাস কোভিড-১৯ বাংলাদেশসহ সবাই অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে গর্ববোধ করি যে এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং পরপর দুটি বাজেটে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি কাজ করতে পেরেছি। এ ছাড়া যখন বাংলাদেশে কোভিডের কারণে লকডাউন ও চলাচলে নিষাধাজ্ঞা এবং সীমানা অতিক্রম বন্ধ ছিল ওই সময় আমাদের টেকনিক্যাল সহায়তার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিলম্ব হয়নি। কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইয়ো হায়াকাওয়া বলেছেন, সহসাই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছবে। বিগত তিন বছর আমি এ দেশে কাজ করেছি। দেশটির নানা খাতে আমি নিবিড়ভাবে জড়িত। বাংলাদেশের অর্জন সত্যিই বিস্ময়কর। করোনা সংকট মোকাবিলাসহ নানা খাতে দেশটির অর্জন বিস্ময়কর বটে।
জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ঢাকা মেট্রোরেল ট্রান্সপোর্ট লাইন-৬, প্রজেক্ট এমআইডিআই এবং বাংলাদেশ ইপিজে প্রজেক্টের কাজ দ্রুত গতিয়ে চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
জাপানের এই উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে ঢাকা ম্যাস রেপিড ট্রানজিট ডেলেপমেন্ট এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গত জুনে ১৪৪ কোটি ডলারের (১৬৫৮৬ কোটি ইয়েন) ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ম্যাস রেপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ডলার (১৩৩৩৯ কোটি ইয়েন)। আর দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে বাকি ৫২ কোটি ডলার (৩৩৪৬ কোটি ইয়েন)। এ ছাড়া জাইকার সহায়তায় মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অবকাঠামো ছাড়াও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারসহ যাবতীয় উন্নয়ন খরচ মেটাতে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসাবে আরও ৬০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো তা চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। এ ছাড়া আড়াই হাজারে জাপানি অর্থায়নে ইকোনমিক জোন হচ্ছে- সেখানে কাজ করতে চায় জাইকা। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রকল্পটি দ্রুত সময়ে একনেক সভায় উঠবে। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুতে জাপান কাজ করছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন জাইকা থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া গেলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমে আসবে। শুধু জাইকা নয়, অন্যান্য দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির কাছেও বাজেট সহায়তা হিসাবে ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জাইকার বাংলাদেশের আবাসিক প্রধান প্রতিনিধি হয়ে ইয়ো হায়াকাওয়া ২০১৯ সালে যোগদান করেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নতুন আবাসিক প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেছেন ইচিগুচি তোমোহিদ।