অর্থনীতি

মন্ত্রণালয়ের টাকা কেন দুর্বল ব্যাংকে, তদন্ত হবে: রিজওয়ানা হাসান

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের টাকা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে। এ টাকাগুলো কোন বিবেচনায় এসব ব্যাংকে রাখা হয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমার (বন, পরিবেশ ও জলবায়ু) মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে সরকার ৫৯৭ কোটি টাকা দেয়। বিগত সরকার এ টাকা ফারমার্স ব্যাংকে রাখে, যেটি বর্তমানে আমরা বলি পদ্মা ব্যাংক। ফারমার্স ব্যাংকে রাখা টাকা সুদে আসলে বেড়ে হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৩ টাকা। বারবার টাকা চাওয়ার পরও বর্তমান পদ্মা ব্যাংক সেই টাকা দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো কনসালটেশন না করেই পদ্মা ব্যাংক বছর বছর এফডিআর রিনিউ করছে। তাদের বর্তমান বক্তব্য ২০৩৮ সালের আগে তারা এ টাকা দিতে পারবে না। না সুদ, না আসল। এ রকম সমস্যা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েও আছে। সে বিষয়ে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এসব টাকা দুর্বল ব্যাংকে কোন বিবেচনায় রাখা হয়েছে, বলতে পারি না। এটি তো পাবলিক মানি। সিদ্ধান্ত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে, যাতে এ পাবলিক মানি আমরা ফেরত পেতে পারি।

ব্যাংকিং খাত ভঙ্গুর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং সংস্কারে কতটা সময় ধরে প্রচেষ্টা দিতে হচ্ছে, এর একটি সামান্য নমুনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

এ টাকা কবে পাওয়া যাবে, তা জানলে খুশি হতেন জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, দ্রুতই মিটিংটা ডাকা হবে। ব্যাংকগুলোর বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। তারপর কত সময়ে দিতে পারবে, তারা বলবে। ২০৩৮ সালের কত আগে, কত অনুপাতে ফেরত আনা যায়, তা রোডম্যাপে বলা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের টাকা সরকারি ব্যাংকে রাখছি। তাদের বন্ড কেনার সিস্টেম আছে। ইন্টারেস্ট বেশি পাওয়া যায়। ব্যাংকে টাকা কে, কেন এবং কোন ব্যাংকে রেখেছিল, সেসব অনুসন্ধান করে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা ভাবছি।

যুব ও ক্রীড়া ফাউন্ডেশন আছে জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রম কল্যাণের অধীনে ফাউন্ডেশন আছে। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রাইভেট ব্যাংকে ১১৪ কোটি টাকা রাখার খোঁজ পেয়েছি। দুটি ফাউন্ডেশনের অর্থ আলাদা। অর্থের পরিমাণ কত, তা জানব। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের এফডিআর আছে। গভর্নর বলেছেন, কিছু ব্যাংক দেউলিয়ার দিকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পাবলিক মানি যেন জনগণের জন্য রিস্টোর (উদ্ধার) করা যায়, জনগণের কাজে লাগানো যায়।

নির্বাচন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো, জানালেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা

সংস্কারের জন্য সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, সেগুলো তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা করছে সরকার। তারপর একপর্যায়ে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যাবে সরকার। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তারপর নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার।

বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *