অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতির চাপে বিশ্ব অর্থনীতি

বিশ্বব্যাপী চলা করোনা মহামারির মধ্যে দেশগুলোর অর্থনীতি তীব্র চাপের মধ্যে পড়েছে। উত্পাদন কমে যাওয়াসহ নানা উপসর্গে ভুগছে বিশ্ব অর্থনীতি। তবে এশিয়া থেকে আমেরিকা এমনকি ইউরোপের দেশগুলো এখন ধুঁকছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোর চাইতে এশিয়ার দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির অবস্থা কিছুটা ভালো। মূলত :বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে জোগানের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণত মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। বিশেষ করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেড়ে যাওয়ার ফলে মুল্যস্ফীতি দেখা যায়। এছাড়া বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে উদ্যোক্তারা চাপের মুখে কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দেন।

এজন্য উদ্যোক্তারা উত্পাদিত পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। অর্থনীতিবিদরা বলছে, বাংলাদেশের আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আর সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এ বিষয়ে বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর থেকে বাংলাদেশ খাদ্য বিশেষ করে চাল এবং গমের আমদানি বাড়িয়েছে। এ অর্থবছরে খাদ্য আমদানিতে বাংলাদেশের নির্ভরতা ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ আমদানির হার এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযয়ী গত জুলাইতে এটি ছিল ৫ দশমিক চার শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে খাদ্যপণ্যের মূল্য। এর বাইরে জ্বালানি, হাউজিং এবং বস্ত্রখাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানকার মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। চিকিৎসা খাতেও এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে দেশটিকে অর্থনীতিতে প্রচুর অর্থ জোগান দিতে হয়েছে। যেটি মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে।

এদিকে, এশিয়ার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও এখানকার পরিস্থিতি তেমন খারাপ নয়। তবে বাংলাদেশ এবং ভারতসহ কয়েকটি দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। তবে ভারতের মূল্যস্ফীতিতে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বেশ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে। এশিয়ার অপরাপর যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার প্রভৃতি।

অপরদিকে, ইউরোপের দেশগুলোতে চলতি সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দুই শতাংশের ওপরে। গত এপ্রিলে দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল দুই শতাংশ। অথচ এক বছর আগে এই হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ। গ্রিস, মাল্টা এবং পর্তুগালে মূল্যস্ফীতির হার কম থাকলেও হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং লুক্সেমবার্গে এই হার পাঁচ শতাংশের ওপরে। এছাড়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন প্রভৃতি দেশের মূল্যস্ফীতির হারও ঊর্ধ্বমুখী।

শুধু এশিয়া ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র নয়, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মূল্যস্ফীতিও গত এক বছরে বেশ বেড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটেছে।

কার্গো বিমান এ সময় বন্ধ ছিল। এছাড়া মধ্যখানে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকার কারণে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে পৃথিবীব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *