যুক্তরাষ্ট্রে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ উদাহরণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ‘একপেশে এবং অকার্যকর’।
‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ কারণে র্যাবের সাবেক ও বর্তমানসহ সাত কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএস এর শরৎকালীন নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, পরে তাকেই আবার লাল গালিচা অভ্যর্থনা দিয়েছে, যা প্রমাণ করে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃতপক্ষে অকার্যকর।”
যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, এ বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতন এবং প্রক্রিয়াগত বর্ণবাদী বৈষম্য বন্ধে মার্কিন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
হাছান মাহমুদ জানান, অক্টোবরে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার এক নিবন্ধে বলা হয়, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি হেফাজতে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ মৃত্যুই ‘আনরিপোর্টেড’ অথবা ‘মিসলেবেলড’।
আন্তর্জাতিক এ সংবাদ মাধ্যমটিতে প্রকাশিত এসব তথ্য তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “অর্থাৎ এসব মৃত্যুর কথা ও আসল কারণ জানানো হয়নি।”
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হলেও পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর হার শ্বেতাঙ্গদের সাড়ে তিনগুণ বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় পুলিশ একজন কৃষ্ণাঙ্গের গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে মেরে ফেলার মর্মান্তিক দৃশ্য বিশ্ববাসী আজও ভোলেনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে ২০২০ সালের মে মাসে এক পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডকে হাতকড়া পরিয়ে গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রাখলে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার ৯ মিনিটের ভিডিও সাড়া বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তোলে। পরবর্তীতে হত্যার দায়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ২২ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত।
হছান মাহমুদ বলেন, “শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের শিশুরা তাদের বাড়িঘরে হামলাকারী ইসরায়েলীদের ওপর ঢিল ছুঁড়লে ইসরায়েলী বাহিনী তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। যুক্তরাষ্ট্র তো সেই ইসরায়েলিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
“বরং জাতিসংঘে কোনো দেশ যদি এই মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব দেয়, যুক্তরাষ্ট্রই তার বিরোধিতা করে ভেটো দেয়। সুতরাং তাদের এই নিষেধাজ্ঞা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, একপেশে ও অকার্যকর।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে তারা ও আমাদের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী একসাথে কাজ করে আসছে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।
এই তালিকায় র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমদের সঙ্গে কক্সবাজারে র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে।
এছাড়া আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশের ১২ কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার কথা বলেছে সে দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর।
সেখানে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব, এর সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ও বর্তমান আরও পাঁচ কর্মকর্তার নাম।