রোহিঙ্গা সমস্যা হলো মিয়ানমারের সৃষ্ট বৈশ্বিক ইস্যু। আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে রক্ষা করেছে। অথচ তাদের নিয়ে বাংলাদেশকে এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে; কঠিন ভার বহন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি এবং অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
অপরদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিয়ানমার রক্ষা করছে না। এ অবস্থায় সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। প্রয়োজনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। বক্তব্য দেন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষদূত নেওলিন হেইজার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্নে ভান লিওয়েন, মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি ও শরণার্থীবিষয়ক আঞ্চলিক সমন্বয়ক ম্যাকেঞ্জি রো এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা মানবাধিকারের কথা বললেও তিন বছরে দেশটিতে ১০০ গুণের বেশি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট ছয় বছরে পড়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকে রক্ষা করেছেন। অথচ রোহিঙ্গারা এখন দেশের সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি এবং অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। এ অঞ্চল ও অঞ্চলের বাইরেও তারা নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে। ড. মোমেন বলেন, এ সমস্যার স্বল্পমেয়াদি কোনো সমাধান নেই। স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সসম্মানে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় দেশ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার আমাদের খুব কাছের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা ছাড়া আর কোনো ইস্যু নেই। আর রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নয়। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করেছে। এটি তাদেরই সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্য জরুরি।
নেওলিন হেইজার বলেন, যেকোনো উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি- তারা দেশে ফিরতে চান। প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার ভিত্তিতে। আর পরিস্থিতি মিয়ানমারকেই সৃষ্টি করতে হবে। সংকটের মূল কারণ খুঁজতে হবে।
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নানা পথ ও উপায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বহুপক্ষীয় উদ্যোগ ও ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ; জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক প্রণোদনা বন্ধ করা, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া, পৃথকীকরণ নীতি অবলম্বন করা ইত্যাদি।
ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। এর সমাধানও মিয়ানমারকে করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও নৃশংসতার তদন্ত স্বাধীনভাবে করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে।
ইতো নাওকি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে জাপান। তাদের দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসন চায় জাপান।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মানবিক কারণে আমরা আশ্রয় দিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছরে কোনো রোহিঙ্গাকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমর্থন জরুরি।