কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ হলেই সরকার উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় টিকাদান কর্মসূচি নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এবং এই কার্যক্রম সম্পন্ন হলে আমরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে সক্ষম হব। আর কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হবে।
“আমরা জানি, স্কুল না থাকাতে ছেলে মেয়েদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। সেদিকটা বিবেচনায় রেখে আমরা এই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা পরিকল্পনা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় দেশের সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছুটি ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে সরকার পরিকল্পনা করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবাইকে টিকা দিয়ে মে মাসে হল ও ক্লাস খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং টিকার সঙ্কটে সে চেষ্টা এগোয়নি।
চীনের উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোভ্যাকের টিকা পাওয়ার পর সম্প্রতি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের তা দেওয়া শুরু হয়েছে।
সরকার শিক্ষাকে ‘সব থেকে বেশি’ গুরুত্ব দেয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটেও শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানব সম্পদ উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
“করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘আমার গৃহ আমার স্কুল’ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ‘ঘরে বসে শিখি’ সম্প্রচার করা হচ্ছে বাংলাদেশ সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি রেডিও এবং অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদান চলমান রয়েছে।
“এতে করে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীকে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রাখা সম্ভবপর হয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিরতণ করেছে এবং উপবৃত্তিও প্রদান করেছে।”
বিভিন্ন উৎস থেকে ইতোমধ্যে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা পাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, প্রয়োজনীয় টিকা কেনার জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
“দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে পর্যায়ক্রমে আমরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কোন ভ্যাকসিন কোন বয়স পর্যন্ত দেওয়া যাবে, তার একটা সীমাবদ্ধতা আছে, এটা ডব্লিউএইচওর নির্দেশ।
“সেটা বিবেচনায় রেখে এমনকি স্কুল থেকে শুরু করে এবং উচ্চশিক্ষায় যারা… সকলে যাতে ভ্যাকসিন পায়। এর মধ্যে যেন আমরা স্কুল খুলতে পারি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারি সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নেব,” বলেন শেখ হাসিনা।
‘সঙ্কটে পাশে আছি, থাকব’
মহামারীর সঙ্কটে সরকার মানুষের পাশে আছে এবং আগামীতেও থাকবে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার সরকার মানুষের জীবন জীবিকার সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সামনের দিনগুলোতে যে উদ্যোগ নেওয়ার দরকার হবে, সরকার দ্রুততার সঙ্গে তা নেবে বলেও সংসদে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতের প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টি মাথায় রেখে অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও সংসদে তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীর আগমন। আজকে বিশ্বব্যাপী এই মহামারী। আমি এইটুকু বলব, এই মহামারী কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অভিযাত্রায় ইনশাল্লাহ আমরা পুনরায় শামিল হতে পারব।”
সরকারের সাহসী পদক্ষেপের ফলে এই দুর্যোগের গের মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতিও সার্বিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।”
সরকারপ্রধান বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৬৪ শতাংশ, রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৭০ শতাংশ। মে মাসে সার্বিক মূল্যস্থিতি ছিল ৫.২৬ শতাংশ। পাশপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
অধিবেশনে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা এ সময় করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টভাবে একটা জিনিস জানতে পারেন, যে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ স্বত্ত্বেও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে আমাদের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।”