শুরু থেকে আক্রমণের পসরা মেলল ভারত। জমাট রক্ষণে প্রথমার্ধে ভালোই পাল্টা জবাব দিল বাংলাদেশ। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর দৃঢ়তায় আর রিয়াদুল হাসান রাফির গোললাইন সেভে স্বস্তি নিয়ে গেল বিরতিতে। কিন্তু শেষ দিকে রক্ষণ দেয়ালে ধরল চিড়। হারের বিষাদও সঙ্গী হলো জেমি ডের দলের।
কাতারের দোহায় জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে সোমবার ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। দুটি গোলই করেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রি।
বাছাইয়ে ‘ই’ গ্রুপে সাত ম্যাচে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম হার; দুই পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকল আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-১ ড্র করা জেমির দল। অন্যদিকে চলতি বাছাইয়ে ভারত পেয়েছে প্রথম জয়ের স্বাদ।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা আরও বাড়াল। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে সবশেষ তাদের বিপক্ষে জিতেছিল দল। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রথম লেগে কলকাতার সল্টলেকে ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ওই ড্রয়ে বাছাইয়ে পয়েন্টের খাতা খুলেছিলেন জামাল-ইব্রাহিমরা।
আফগানিস্তান ম্যাচে সোহেল রানা হাতে চোট পাওয়ায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন আনেন জেমি ডে। সোহেলের জায়গায় সেরা একাদশে ঠাঁই দেন মানিক হোসেন মোল্লাকে।
ছেত্রি ও মানবির সিংয়ের সঙ্গে বিপিন সিং, উদান্তা সিং ও সুরেশ সিংও শুরু থেকে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু রহমত মিয়া-তপু বর্মন-কাজী তারিক রায়হান-রাফিতে সাজানো রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় জিকোর তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারছিল না ভারত।
অষ্টম মিনিটে রহমত মিয়ার থ্রোয়ে সতীর্থের হেডের পর বক্সে বল পেয়েও পা ছোঁয়াতে পারেননি তারিক। ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ডিফেন্ডার সেভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। ফলে সুযোগ নষ্ট হয় প্রতি আক্রমণ নির্ভর খেলা বাংলাদেশের।
পঞ্চদশ মিনিটে রক্ষণের দুর্বলতায় বিপদে পড়তে বসেছিল বাংলাদেশ। ব্রেন্ডন ফের্নান্দেসের থ্রু পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন মানবির কিন্তু জিকো ছুটে এসে পথ আগলে দাঁড়ালে ভারতের এই ফরোয়ার্ড ঠিকঠাক পোস্টে শট রাখতে পারেননি। ক্রস মতো বাড়িয়েছিলেন, বিপদমুক্ত করেন আফগানিস্তান ম্যাচে গোল করা ডিফেন্ডার তপু।
দুই মিনিট পর সতীর্থের নিখুঁত পাস ধরে মানবিরের শট ফেরান জিকো। ৩৪তম মিনিটে মাশুক মিয়া জনিকে তুলে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে নামান জেমি।
একটু পর রাফির দারুণ সেভে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। কর্নার থেকে চিংলেনসানা সিংয়ের হেড গোললাইন থেকে ফেরান আফগানিস্তান ম্যাচে তপুর গোলের উৎস রাফি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে তারিকের হেড অনায়াসে গ্লাভসে নেন গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রহমত ভুল পাসে বল তুলে দেন ছেত্রির পায়ে। ভারত অধিনায়ক বল বাড়িয়েছিলেন মানবিরের উদ্দেশে। কিন্তু তিনিও বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। ৭০ শতাংশ বলের নিয়ন্ত্রণ রাখা ভারতের বিপক্ষে সমতার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দুটি পরিবর্তন এনে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে ভারত। উদান্তা ও বিপিনকে তুলে আশিক কুরুনিয়ান ও মোহাম্মদ ইয়াসিরকে নামান দলটির ক্রোয়াট কোচ ইগর ইস্তিমাচ।
দ্বিতীয়ার্ধেও ব্রেন্ডন ও মার্টিন্স গ্ল্যানের সঙ্গে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না জামাল ভূইয়া-বিপলু আহমেদ জুটি। ফলে সহজে আক্রমণের সুযোগ পাচ্ছিলেন ছেত্রি-কুরুনিয়ানরা।
৬৩তম মিনিটে ফ্রি কিকে ছেত্রি বাজে হেডে সুযোগ নষ্ট করেন। ভারতের হয়ে ৭২ গোল করা এই ফরোয়ার্ড বক্সে অনেকটা অরক্ষিত ছিলেন! তিনি মিনিট পর বিপলুকে তুলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে নামান জেমি। এরপর ডি-বক্সের একইভাবে অরক্ষিত থাকা ভারতের শুভাশীষের হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
৭৩তম মিনিটে মতিনের জায়গায় সুমন রেজাকে নামান জেমি। ছয় মিনিট পর রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে বাংলাদেশ। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে এক ছুটে রক্ষণলাইন পেরিয়ে গিয়ে কোনাকুনি হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ছেত্রি। ভারত অধিনায়ক যে পেছন থেকে ডিফেন্সলাইন পেরিয়ে গেছেন, তার টেরই পাননি সামনে থাকা তপু।
দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ছেত্রির দ্বিতীয় গোলে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা শেষ হয়ে যায়। বাইলাইন থেকে সতীর্থের কাট ব্যাকে ভারত অধিনায়কের শট ক্রসবার ঘেঁষে জাল খুঁজে নেয়।