অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে ঢুকছে নতুন বিনিয়োগকারী

দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় চলছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই মূল্যসূচক বাড়ছে। একইসঙ্গে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। পুরাতনদের মধ্যে যারা নিষ্ক্রিয় ছিল তাদের অনেকেই বাজারে ফিরছেন।

সেন্ট্রাল ডিপজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) হিসাবে দেখা গেছে, গত এক মাসেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রায় ৮২ হাজার নতুন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলেছেন। প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি যেকোনো মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য বিও অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়ার অর্থ হলো শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধসের পর থেকে বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি বাজারমুখী হতে চায়নি। এরপর মাঝে মধ্যে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও তা বেশিদিন টেকসই হয়নি। ফলে গত ছয় বছরে ৯ লাখের মতো বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। নিয়মানুযায়ী, প্রতি বছর জুন মাসে বিও অ্যাকাউন্ট ফি পরিশোধ না করলে অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি ৪৫০ টাকা।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, বাংলাদেশে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বড় পরিবর্তন, বাজারে নতুন নতুন কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) অফার, ব্যাংকে সুদের হার কমে যাওয়া, করোনা ভাইরাস পরবর্তীতে অন্য ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা প্রভৃতি কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এতে পুরাতনদের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ঢুকছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বলেন, বিভিন্ন কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীরা আসেন। সাধারণত বাজার যখন ভালো হয় তখন বেশি বিনিয়োগকারী আসেন। এসব বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগই হয়তো আগে ছিলেন। দীর্ঘদিন বাজার ভালো না থাকায় তারা বিও অ্যাকাউন্ট ফি বাবদ যে অর্থ দিতে হয় সেটাও জমা দেননি। ফলে তাদের অ্যাকাউন্ট ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে গিয়েছিল। তারা আবার ফিরেছেন। আবার নতুন বিনিয়োগকারীও শেয়ারবাজারে ঢুকছে।

তিনি বলেন, সাধারণত যখন ভালো আইপিও বাজারে আসে তখন নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসে। আবার পুরাতনদেরও অনেকে সক্রিয় হন। সম্প্রতি মোবাইল অপারেটর রবির আইপিও এসেছে। এটা কেনার জন্য অনেকে নতুন করে বাজারে ঢুকেছেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের অনেক সম্ভাবনা আছে। এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ শেয়ারের দাম প্রকৃত দামের চেয়ে নিচে আছে। ইতিমধ্যেই মার্জিন ঋণের সুদহার কমানো হয়েছে। বাজারে তারল্য (নগদ টাকা) আছে। কোভিড পরবর্তীতে অন্য ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব চলছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, কোভিড পরবর্তীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া নতুন কমিশন এবং তাদের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সব মিলিয়ে বাজার ভালো হচ্ছে এজন্যই বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ারবাজারে আসছে।

সিডিবিএলের তথ্যমতে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৫২ হাজার ১৬৮টি। আর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৭টি। সেই হিসেবে বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৮১ হাজার ৮২৯টি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে অবস্থানকারী বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ৭৬ হাজার ৩৮৯টি বিও হিসাব খুলেছেন। এর মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৬টি। আর জানুয়ারি মাসের শেষে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৫টি।

জানুয়ারি মাসে বিদেশি অবস্থানকারী বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ৫ হাজার ৫৭০টি বিও হিসাব খুলেছে। ডিসেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫৯টিতে। জানুয়ারি মাসের শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৪২৯টি। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন কোম্পানি বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৮৩৫টি। আর জানুয়ারি মাসের শেষে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৩টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *