আজ পহেলা আগস্ট। শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোকের মাসে আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গসংগঠন মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শোকের মাস আগস্টের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আলোর মিছিল করে। এর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের শোকের মাসের কর্মসূচি শুরু হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকের মাস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কর্মসূচি পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজন।
সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপত্গামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। সেদিন অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার বারবার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এই শোকের মাসেই গ্রেনেড হামলায় হত্যার চেষ্টা করা হয় জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এ ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
শোকের মাসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
আগামী ৫ আগস্ট থেকে মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এবার জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি সীমিত পরিসরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—আজ পহেলা আগস্ট রবিবার বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগস্ট মাসব্যাপী কোরআন খতম এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অসহায়-দুস্থদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ কৃষক লীগের আয়োজনে রক্তদান ও প্লাজমা সংগ্রহ কর্মসূচি।
৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৮টায় আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সোয়া ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন।
৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৮টায় ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সোয়া ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদলের শ্রদ্ধা নিবেদন।
এছাড়াও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভা।
১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনাসভা।
২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ঘরোয়া আলোচনাসভা।
এছাড়া, ২৭ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।