প্রশাসনসহ কোনো কিছুই এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের দুই শরিক এনডিপি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “এত বেশি দুর্নীতি সবখানে- প্রতিটি খাতে, প্রতিটি ক্ষেত্রে- তাদের এখন এই অবস্থা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সবখানেই আপনার এত বেশি দুঃশাসন হয়েছে, মিস রুল হয়েছে যে, নাথিং ইজ আন্ডার দেয়ার কন্ট্রোল।
“অর্থাৎ তাদের (সরকার) কোথাও কোনো ম্যানেজমেন্ট নাই। তারা সমস্ত কিছুতে দুর্নীতি করেছে। যার ফলে কনট্রোল ওভার দ্যা হোল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, যেটা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’’
আগামী বছর খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, “উনি কেন এটা বলছেন, আমরা বুঝতে পারছি না। কিছুদিন আগে উনারা দাবি করেছে যে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আজকে কী এমন ঘটলো যে, উনারা এখন ভয় পাচ্ছেন যে খাদ্য সংকট দেখা দেবে!”
সরকারের দুর্নীতির কারণেই লোড শেডিং চরমে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
“যে কারণে বিদ্যুতের একই অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, আজকে বিদ্যুৎ তারা দিতে পারছে না; দেয়ার ইজ অনলি রিজন।”
‘সব খাতেই দুর্নীতি চলছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, “হাজার কোটি টাকায় ইভিএম কিনতে যাচ্ছে একটি জালিয়াতির ভোট করার জন্য। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আর মুখ্য সচিবের বাড়ি তৈরি করার। এটা আনবিলিভেবল, অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রে। একটা দুইটা নয়, সমস্ত খাতেই আজকে দুর্নীতি চলছে।”
তিনি বলেন, “এই সরকার যে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে… আমি আজকের কথাই বলি, আমার নিজের কথা। আমি আজকে সকাল ৯টায় উত্তরার বাসা থেকে বেরিয়েছি। এই যে নতুন রাস্তার (উত্তরা) কথা, যার কথা আমি বারবার বলছি আপনাদেরকে। গত ১০ বছর ধরে জনগণকে ভোগান্তি দিচ্ছে।
“উত্তরার রাস্তা পেরিয়ে আসতে আমার দুই ঘণ্টা লেগেছে। তার পরেও পুরোটা আসতে পারিনি। আমাকে রিকসা নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছন দিক দিয়ে আসতে হয়েছে। গাড়ি রেখে আসতে হয়েছে। অর্থাৎ তাদের কোথাও কোনো ম্যানেজমেন্ট নাই। তারা সমস্ত কিছুতে দুর্নীতি করেছে।”
গণসমাবেশ দেখে সরকারে ‘আতঙ্ক’
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণসমাবেশ দেখে ওদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে, ময়মনসিংহে জনতা ঢলের মতো নেমে এসেছে। ময়মনসিংহে যে কাজটা ওরা করেছে, তা আপনারা সবাই জানেন। সেখানে অঘোষিত কারফিউ ঘোষণা করেছে। একটা গাড়ি-ঘোড়া কিছু চলতে দেয়নি।
“সেখানে আগের রাত্রে আমাদের বর্ষীয়ান জননেতা নজরুল ইসলাম খান সাহেব যে হোটেলে ছিলেন, সেই হোটেলে গুলিবর্ষণ করেছে, ককটেল নিক্ষেপ করেছে। তার পরেও তারা কিন্তু কোনোই বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। উল্টো দেখেন পুলিশকে তারা (ক্ষমতাসীনরা) কিভাবে ব্যবহার করে? আমাদের ৪শ ৩৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে “
তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটার উত্তর আমি দেব না। ইট ইজ নট মাই বিজনেস।”
এর আগে মঙ্গলবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রথমে এলডিপি এবং পরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে সংলাপ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংলাপে এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী নিজ নিজ দলের ১০ সদস্যের নেতৃত্ব দেন।
এনডিপির অন্য সদস্যরা হলেন- আবদুল্লাহ আল হারুন, মজিবুর রহমান, মুসা মন্ডল, জামিল আহমেদ, আলী আকবর, সুলতানা পারভীন, মিজানুর রহমান পাটোয়ারি, আব্দুল আজিজ ও হাফেজ আবু সাঈদ।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন, মওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, মওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, আল্লামা শেখ মজিবুর রহমান, মওলানা শহীদুল ইসলাম আনসারী, মওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মওলানা আব্দুল হক কাওসারী, মওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কাস, মুফতি জাকির হোসাইন খান ও মওলানা আতাউর রহমান খান।
দুই সংলাপে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় দফা সংলাপে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাগপা, মুসলিম লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব।