সরকারের সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজদের কারণেই প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
সোমবার (১৪ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখার দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, কী দুর্ভাগ্য আমাদের। এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, ১০ টাকা কেজি চাল দেবো। আর এখন চালের দাম কত? কোনো হিসাব নাই। জিজ্ঞাসা করলে বলে কখনকার কথা বলতেছেন গতকাল না আজকের? সকালের না দুপুরের? কারণ গতকাল যে দামে জিনিসপত্র পাওয়া যেত আজকে সে দামে পাওয়া যায় না। সকালে যে দামে পাওয়া যায়, বিকেলে সে দামে পাওয়া যায় না। প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। কিন্তু কৃষক যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করেন। তারা কিন্তু ন্যায্যমূল্য পায় না। যারা কেনে তারাও ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে না। তাহলে মাঝখানের এই টাকাটা খায় কারা? চাঁদাবাজরা, সিন্ডিকেট ওয়ালারা? এরা কাদের লোক, এরা এই সরকারের লোক। কাজেই আমার আপনার কষ্ট, কৃষকের কষ্টের জন্য দায়ী এই বিনাভোটের সরকার। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় একটাই সেটা হলো এই সরকারের দুঃশাসন থেকে জনগণকে মুক্ত করা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
নজরুল ইসলাম বলেন, এক সময় একটা বক্তৃতা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ভাতে মারবো, পানিতে মারবো ইত্যাদি। তারা বলেছিলেন, মারবো কিন্তু আজকে যে সরকার ক্ষমতায় আসীন তারা মারা শুরু করেছেন। যে চালের দাম ছিল ১৫ টাকা তা হয়ে গেছে ৪৫ টাকার বেশি। পানির দাম গত ১৩ বছরে ১৪ বার বেড়েছে। আবার শতকরা ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কাজেই মায়েরা-বোনেরা আপনাদের সন্তানদের যদি এই ভাতে মারা পানিতে মারা থেকে বাঁচাতে চান, তাহলে লড়াইয়ের আর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আন্দোলন সংগ্রামের সফল এবং পরিক্ষিত নেত্রী খালেদা জিয়া যাতে এই সরকারের অনাচার দুর্নীতি এবং অক্ষমতার বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করতে না পারেন সেজন্যই তাকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু জনগণ পরিবর্তন চায়। জনগণ এই নির্যাতন, অপশাসন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষ্ট থেকে মুক্তি চায়। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা তাদের মা, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে পাশে চায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যখনই প্রধানমন্ত্রী বলবেন উন্নয়ন করেছি তখনই ধরে নিতে হবে আগামীকাল চালের দাম বাড়বে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। এই হচ্ছে আওয়ামীলীগ আর এই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী। জনগণ খেলো কী মরলো এটার তারা কোনো তোয়াক্কা করে না। এই সেই আওয়ামীলীগ যখন মানুষ না খেয়ে ফুটপাতে কাতরাচ্ছে, ১৯৭৪ সালের কথা আপনাদের মনে আছে। মানুষের জীবন আর মৃত্যু রাস্তায় লুটোপুটি করছে। তখন এই প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতেই সোনার মুকুট পড়ে তার ভাইদের বিয়ে হয়েছে। এটা আওয়ামীলীগের ঐতিহ্য। এরা চালের দাম বাড়াবে, ডালের দাম বাড়াবে।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরজাহান ইয়াসমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়েবা ইউসুফ, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রুনা লায়লা রুনা, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রুমা আক্তার, সদস্য সচিব নাসিমা আক্তার কেয়া প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে মহিলা দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কদমফুল ফোয়ারার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ বাধা দিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। পরে প্রেসক্লাবের সামনে এসে মিছিল শেষ হয়।